দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচে’ বড় চামড়ার বাজার যশোরের রাজারহাট। ঈদুল আজহা’র পর মঙ্গলবার ছিল প্রথম হাটবার। গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও এ হাটের কেনা-বেঁচা ছিল চরম হতাশাজনক।
সাধারণত কোরবানীর পর প্রথম হাটবারেই রাজারহাট সরগরম হয়ে ওঠে। আশপাশের ১০/১২টি জেলার নিয়মিত ও মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ীরা তাদের সংগৃহীত চামড়া নিয়ে এ হাটে তোলেন। কিন্তু এবার যশোরের বাইরের জেলা থেকে এ হাটে চামড়া উঠেছে খুবই কম। ঢাকা থেকে আসেনি বড় চামড়া ব্যবসায়ী বা ট্যানারি প্রতিনিধিরা। এর প্রভাব পড়েছে চামড়ার দামে। খরচও তুলতে পারছেন না চামড়া বিক্রেতারা।
রাজারহাট চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবারের হাটে মাত্র ৫ হাজার চামড়া কেনা-বেঁচা হয়েছে। গতবারও এরচে’ বেশি চামড়া হাতবদল হয়েছিল।
যশোরের কেশবপুর থেকে চামড়া নিয়ে রাজারহাটে বিক্রি করতে এসেছিলেন পরেশ দাস। তিনি বলেন, ‘৭০০-৮০০ টাকা করে চামড়া কিনেছি। লবন ও পরিবহণ খরচসহ একেকটা চামড়ায় ৯০০ টাকার ওপরে খরচ পড়েছে। হাটে ৮০০ টাকার বেশি কেউ দিতে চাচ্ছে না। মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী দিপংকর বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনার পর এখন বড় বড় চামড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা দাম বলছে। আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ৩০-৪০ টাকা ফুট দরে কিনছে। আরেক মৌসুমি ব্যবসায়ী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ছাগলের চামড়ার অবস্থা আরও খারাপ। তিনি ২২০টি ছাগলের চামড়া হাটে এনেছেন। লবন দিয়ে প্রতি পিসে খরচ পড়েছে ৫০ টাকা। অথচ ২ থেকে ২৫ টাকার বেশি কেউ দাম বলছে না।
তবে আড়তদাররা বলছেন, চামড়ার মান ভাল না, তাই দাম কম উঠছে। আড়তদার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবার চামড়া খুবই কম উঠেছে, বাজারও জমেনি। যে চামড়া উঠেছে তার মানও খারাপ’।
চামড়া ব্যবসায়ী আবদুল মালেক বলেন, ‘ট্যানারি যে দর দিচ্ছে, সরকার ঘোষিত দামের সঙ্গে তার মিল নেই। ফলে আড়তদাররা কম দামে চামড়া কিনতে বাধ্য হচ্ছে’। আরেক চামড়া ব্যবসায়ী খুরশিদ বাবু বলেন, ‘সরকার ট্যানারি মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারেনি। এছাড়া ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের ১৭ বছরের বকেয়া টাকা পড়ে আছে। ফলে তারল্য সংকটে পড়ে আড়তদাররা চামড়া কিনতে পারছেন না’।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অকিল আহমেদ বলেন, এবার সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া দাম বাস্তবে কার্যকর হয়নি। মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দেওয়া ভর্তুকির লবনও কাজে আসেনি’। সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে আগামীতে চামড়ার বাজার আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল