১৭ জুলাই, ২০২৪। কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রূপ নেয় শেখ হাসিনা সরকারের পতন আন্দোলনে। আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করার। পুলিশের পাশাপাশি দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মোতায়েন করা হয় বিজিবি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সারা দেশে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে এ দিন নতুন করে আরও ১৭ জন শহীদ হন।
১৭ জুলাই সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পরদিনের কর্মসূচি হিসেবে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ দিন সকালে মাস্টারদা সূর্যসেনসহ অন্যান্য আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের কক্ষে ভাঙচুর চালান। আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন এবং হল বন্ধের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ জানান। বিকালে ঢাবি ভিসির বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। জানাজা শেষে তারা সমবেত হয়ে টিএসসির দিকে এগোনোর চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়লে শিক্ষার্থীরা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি সমর্থন ও হত্যার প্রতিবাদ জানাতে দুপুরে টিএসসিতে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন ঢাবির কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক এবং বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও তাঁর তিন সহযোগী। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তাঁরা সরতে না চাইলে চার রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। পরে আখতার ও তাঁর সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে পুলিশের বাধায় তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। বিকালে তাঁদের ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নিতে দেখা যায়। পরে সবাই ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল ফাঁকা হয়ে যায়। এর আগে দুপুরের পর থেকে শিক্ষার্থীদের কিছু অংশ হল ছাড়তে শুরু করেন। রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বাধায় পিছু হটতে বাধ্য হন। এ সময় পুলিশ তাঁদের ওপর লাঠিচার্জ এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। রাতে আন্দোলনকারীরা চানখাঁরপুল থেকে শহীদ মিনারের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। লাঠিচার্জ ও সাউন্ড গ্রেনেড দিয়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আন্দোলনকারীরা পিছু হটে আবার চানখাঁরপুলের দিকে ফিরে যান। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা ও শনির আখড়ায় রাতভর পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ ঘটে।
১৭ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সিন্ডিকেট সভায় হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়ার পর রেজিস্ট্রার ভবনের দিকে জুতা ও ইট নিক্ষেপ করেন আন্দোলনকারীরা। পরে জাবি শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক হল ছাড়তে বাধ্য করে ৫ শতাধিক পুলিশ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা আগের দিন ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ ছয়জন শহীদ হওয়ার প্রতিবাদে এ দিন পূর্বঘোষিত গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করেন। জবিতে হল ছাড়ার নির্দেশের প্রতিবাদে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর হল থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় জবি কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে বিকালে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কোটা সংস্কারের দাবিতে ও শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মা সেতু উত্তর থানার সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ।