যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের বাসিন্দা টিম অ্যান্ড্রুজ, যিনি জেনেটিকভাবে পরিবর্তিত শূকরের কিডনি নিয়ে রেকর্ড ২৭১ দিন বেঁচে ছিলেন, অবশেষে সেই কিডনি তাঁর শরীর থেকে অপসারণ করা হয়েছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ম্যাসাচুসেটস জেনারেল ব্রিগহ্যাম হাসপাতালের চিকিৎসক দল মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অ্যান্ড্রুজের শরীর থেকে শূকরের কিডনিটি সরিয়ে দেন। চিকিৎসকেরা জানান, কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছিল। অস্ত্রোপচারের পর এখন তিনি আবার ডায়ালাইসিসে ফিরছেন।
কিডনি প্রতিস্থাপন ও ঝুঁকি
৬৭ বছর বয়সী টিম অ্যান্ড্রুজ যুক্তরাষ্ট্রে এমন চতুর্থ জীবিত ব্যক্তি, যার শরীরে শূকরের জিন-সম্পাদিত কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। শূকরের অঙ্গটি এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যেন মানবদেহ সেটিকে প্রত্যাখ্যান না করে।
১৯৯০-এর দশক থেকেই ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন অ্যান্ড্রুজ। তিন বছর আগে জানা যায়, তাঁর কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে সপ্তাহে তিন দিন, প্রতিদিন ছয় ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস নিতে হতো তাঁকে। এই ক্লান্তিকর জীবন থেকে মুক্তি পেতেই তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন ‘জেনোট্রান্সপ্লান্ট’—অর্থাৎ প্রাণীর অঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের।
অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘যদি এতে আমার জীবন বদলায় এবং অন্যদের উপকার হয়, তবে এই ঝুঁকি নেওয়াটাই সার্থক।’ “আমি আবার বেঁচে উঠেছিলাম”
সিএনএনের ‘অ্যানিমেল ফার্মা’ ডকুমেন্টারিতে অ্যান্ড্রুজ জানান, শূকরের কিডনি তাঁকে নতুন করে প্রাণশক্তি দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি আবার বেঁচে উঠেছিলাম। অনেকদিন পর মনে হয়েছিল আমি সত্যিই জীবিত।’
কিডনি প্রতিস্থাপনের পর তিনি আবার রান্না করা, ঘর পরিষ্কার করা, এমনকি প্রিয় কুকুর কাপকেককে নিয়ে হাঁটতে বের হওয়াও শুরু করেন। গত জুনে তিনি ফেনওয়ে পার্কে তাঁর প্রিয় দল বোস্টন রেড সক্স–এর খেলা দেখতে গিয়ে ম্যাচ শুরুর আগে প্রথম বল ছোড়ার সম্মান পান।
অভিজ্ঞতা ও কৃতজ্ঞতা
নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফেসবুকে অ্যান্ড্রুজ লিখেছেন, ‘এই যাত্রা ছিল কষ্টে ভরা, অজানা পরীক্ষা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে।’
তবে তিনি গর্বের সঙ্গে যোগ করেন, ‘এই ৯ মাসে আমরা অনেক কিছু শিখেছি ও নতুন কিছু আবিষ্কার করেছি।’
তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সেই শূকরটির প্রতিও, যার নাম ছিল উইলমা (Wilma)। অ্যান্ড্রুজ লেখেন,
‘সে আমার নায়িকা। আমার জীবনের অংশ হয়ে থাকবে চিরকাল।’
নতুন করে অপেক্ষা
বর্তমানে অ্যান্ড্রুজ আবার ডায়ালাইসিস নিচ্ছেন এবং মানব কিডনির অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ কিডনি প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/আশিক