নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। গত ১৫ বছর তারা যে নৃশংস অত্যাচার—নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা ক্ষমার কোনো সুযোগ নেই। এটা দগদগে ঘায়ের মতো এমনভাবে খোচাঁয়, যা স্মৃতিতে আসবেই। শেখ হাসিনা ছিল একজন কুৎসিত স্বৈরাচার, যে হিটলারকেও হার মানিয়েছিল।
আজ শনিবার ঢাকায় এফডিসিতে ‘ক্ষমতার পালাবদলে তরুণ ভোটারদের ভূমিকা’ নিয়ে অয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করেছে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে কেউ আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতা করতে চাইলে তাদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী লীগ আর কখনো সুস্থ ন্যারেটিভ নিয়ে মানুষের সামনে ফিরে আসতে পারবে না। জুলাইয়ের চেতনা আমাদের হৃদয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, যা আরো বহুদিন মশালের মতো জ্বলবে।
তিনি বলেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী তরুণরাও দল করেছে, কিন্তু তারা এখনো সবার কাছে যেতে পারেনি। এনসিপি’র মধ্যে অসংলগ্নতা দেখা যাচ্ছে। তাদের কথায় ও কাজে আরো ঐক্যবদ্ধ ও পরিণত হতে হবে। কিছুদিন আগেও মানুষ সন্দেহ করতো ভোট হবে কি না, কিন্তু এখন মানুষ বিশ্বাস করে ভোট হবে। সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্যে প্রথমে সব দল একতাবদ্ধ না থাকলেও এখন দেখা যাচ্ছে সবাই ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। আগামীতে যারাই সরকার গঠন করবে তাদের জুলাইয়ের আকাঙ্খা ধারণ করেই দেশ পরিচালনা করতে হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ করেন।
তা হলো :— (১) জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে পতিত সরকারের দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার শঙ্কা রয়েছে তাই প্রধান উপদেষ্টা সম্মত সম্ভাব্য সময় ফেব্রুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা। (২) শুধু নির্বাচন কমিশনারদের শাস্তির আওতায় আনা নয়, বিগত নির্বাচনগুলোকে পুলিশ, প্রশাসন, এসপি—ডিসিরা যারা জাল—জালিয়াতির ভোটের সাথে জড়িত তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনা। (৩) শুধু ভোটের দিন নয়, আরপিও সংশোধনের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী পরিবেশ না থাকলে ইসিকে যে কোনো সময় ভোট বন্ধ কারার এখতিয়ার ফিরিয়ে আনা। (৪) নির্বাচন আয়োজনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি নাগরিক সংগঠনগুলোর সাথে নির্বাচন কমিশনকে এজেন্ডা ভিত্তিক সংলাপের আয়োজন করা। (৫) নির্বাচনকালীন সন্ত্রাস, ভীতি সঞ্চার, বা অন্য কোনো ধরনের নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া। (৬) দুর্নীতিবাজ, টাকা পাচারকারী, ব্যাংক লুটেরাসহ ঋণ খেলাপিরা কোনোভাবেই যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য কঠিন আইনের বিধান রাখা। (৭) আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেওয়া। (৮) যেসব আইনের কারণে নির্বাচনকালীন গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশনে বাঁধার সম্মুখীন হতে পারে সেসব আইন বাতিল করা। (৯) নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে সদ্য ঘোষিত কমিশনকে এজেন্ডাভিত্তিক রাজনৈতিক দলসহ নাগরিক সংগঠনগুলোর সাথে সংলাপের আয়োজন করা। (১০) নির্বাচন পরবর্তীতে জাতীয় সরকার গঠনের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্য হতে হবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “তরুণ ভোটাররাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতার পালাবদলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকদের পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সাংবাদিক কাজী জেবেল, সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ