দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো বহুল প্রত্যাশিত ‘মওলানা ভাসানী সেতু’। এতে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের দূরত্ব কমলো অন্তত ১০০ কিলোমিটার পথ। এতে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন তিস্তা নদীর দুই পারের মানুষ।
বুধবার দুপুর পৌনে ১টায় সৌদি অতিথিদের নিয়ে সেতুটি উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
এ সময় ফলক উন্মোচন মঞ্চসহ পুরো এলাকায় উচ্ছ্বসিত হাজারো মানুষের ভিড়ে পা ফেলার জায়গা নেই।
তিস্তাপাড়ের মানুষ সেতুটি পেয়ে অত্যন্ত খুশি। কারণ এতদিন নৌপথই ছিল তাদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। প্রশস্ত সড়কসহ দীর্ঘ নান্দনিক সেতু পাওয়ায় আজ তাদের বাঁধ ভাঙা আনন্দ।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার-কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলা সদর সড়কে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত স্বপ্নের সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৪৯০ মিটার।
বাংলাদেশ সরকার (জিওবি), সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওফিড) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় হয়েছে ৯২৫ কোটি টাকা।
১৪৯০ মিটার দৈর্ঘ এবং ৯.৬০ মিটার প্রস্থের সেতুটির লেন সংখ্যা দু’টি এবং মোট স্প্যান সংখ্যা ৩১টি। এটি একটি প্রি-স্ট্রেসড কংক্রিট গার্ডার সেতু।
সেতুটির মাধ্যমে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে স্বল্প সময় ও খরচে শিল্প ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন এবং ছোট ও মাঝারি কলকারখানা প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
এছাড়া নদীর উভয় তীরের সংযোগসহ উন্নত রোড নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার ফলে এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসার ঘটবে। এলাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নসহ জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
পর্যটনের সুযোগ সৃষ্টিসহ একটি নতুন পরিবহন করিডোর গড়ে ওঠায় রাজধানী ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সঙ্গে ভুরুঙ্গামারী স্থলবন্দরসহ কুড়িগ্রাম জেলার যোগাযোগের দূরত্ব ৪০-৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত কমবে।
গাইবান্ধার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী জানান, মওলানা ভাসানী সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আগে থেকেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। বুধবার দুপুরে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুটি উদ্বোধন করেন। এরপরই সবার জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়।
২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি সেতুর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন হলেও নানা জটিলতা কাটিয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে পুরোদমে কাজ শুরু হয়।
সেতুর উভয় পাশে ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী নদী শাসন করা হয়েছে। এ জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ১৩৩ একর জমি।
সেতুর উত্তর পাশে আর্চ ব্রিজের সামান্য কিছু কাজ ও সংযোগ সড়ক পাকা করার কাজ বাকি থাকলেও মূল সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত