ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে জানিয়েছেন, তাদের কাছে এখন আগের প্রজন্মের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত ও ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইসরায়েল নতুন করে কোনো হামলা চালালে এসব ক্ষেপণাস্ত্রই হবে ইরানের জবাবের প্রধান হাতিয়ার।
জাতীয় প্রতিরক্ষা শিল্প দিবস উপলক্ষে তেহরানে অবস্থানরত বিদেশি সামরিক অ্যাটাশেদের সঙ্গে বৈঠকে নাসিরজাদে এই বার্তা দেন। তিনি ১২ দিনের ইসরায়েল আরোপিত যুদ্ধের শহীদ সেনা কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী, নারী-পুরুষ ও শিশুদের স্মরণ করেন। বলেন, ইসলামী প্রজাতন্ত্রের প্রতিরক্ষা শিল্প এখন সম্পূর্ণ দেশীয় সক্ষমতার ওপর দাঁড়িয়ে জাতীয় নিরাপত্তার প্রধান স্তম্ভে পরিণত হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, ১৩ জুন ভোরে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় আকস্মিক বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যেখানে ইরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদের পরিবারসহ নিশানা করা হয়। কিন্তু ইরান দ্রুত পাল্টা জবাব দেয়। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের ১৫০টি নির্দিষ্ট সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। তিনি দাবি করেন, শেষ পর্যায়ে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের ৯০ শতাংশই সঠিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অকার্যকর করে দেয়।
নাসিরজাদে বলেন, ইরান প্রথমবারের মতো ফাত্তাহ, সাজ্জিল ও খায়বার শেকানসহ উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে, যা যুদ্ধের সমীকরণ পাল্টে দেয়। ইসরায়েল যেখানে বেসামরিক অবকাঠামো ও সাধারণ মানুষকে নিশানা করেছে, সেখানে ইরান কেবল সামরিক ঘাঁটি, গোয়েন্দা ও গবেষণা কেন্দ্র, প্রতিরক্ষা সদরদপ্তরকেই লক্ষ্য করেছে।
তিনি দাবি করেন, পশ্চিমা বিশ্লেষণ অনুযায়ী ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার। তবে কঠোর সেন্সরশিপের কারণে ক্ষতির পূর্ণ চিত্র প্রকাশ করতে পারেনি ইসরায়েল।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশাপাশি সরাসরি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতেও হামলা চালিয়েছে, যা জাতিসংঘ সনদ ও পরমাণু অস্ত্র নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি (এনপিটি)-এর সরাসরি লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নীরবতা ও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণকে তিনি তীব্র সমালোচনা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, যুদ্ধ চলাকালে ইরান কাতারের মার্কিন ঘাঁটি আল-উদেইদে সীমিত আঘাত হেনেছিলো। যাতে স্পষ্ট হয় যে ইরান যুদ্ধ বিস্তৃত করতে চায়নি। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি হলেও ইরান শর্ত দিয়েছিল যে শেষ প্রতিক্রিয়া তাদেরই থাকবে।
নাসিরজাদে বলেন, আমরা শান্তি, নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সহযোগিতার বার্তা দিচ্ছি। তবে যদি শত্রুপক্ষ আবারো আগ্রাসন চালায়, ইরানের জবাব হবে মরণঘাতী, অপ্রত্যাশিত এবং শত্রুর হিসাব-নিকাশের বাইরে।
সূত্র: মেহের নিউজ
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল