বহু মুসলমান এমন আছে, ঈমানের পরিচর্যা না থাকার কারণে ঈমান ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। দুর্বল ঈমান দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য ক্ষতিকর। ঈমানি দুর্বলতা একটি বাস্তবিক বিষয়।
হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের ভেতর ঈমান পুরনো হয়ে যায়, যেভাবে তোমাদের কাপড় পুরনো হয়ে যায়। তাই তোমরা আল্লাহর কাছে ঈমান নবায়নের দোয়া করো।’ (আল-মুজামুল কবির, হাদিস : ১৪৬৬৮)।
ঈমান দুর্বল হওয়ার আলামত
পাপ কাজ করার পর অনুশোচনা না আসা এবং বারবার তা করতে থাকা ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার অন্যতম আলামত। অন্তর কঠিন হয়ে যাওয়া এবং অন্তর থেকে দয়া-মায়া কমে যাওয়া ঈমান দুর্বল হওয়ার নিদর্শন। ইবাদত পালনে অলসতা এবং আমলের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা ঈমান ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। মনের ভেতর কৃপণতা ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। কারো ভেতরে দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষা ও অতিরিক্ত লোভ-লালসা ঈমান দুর্বল হয়ে যাওয়ার চিহ্ন। সর্বোপরি পাপমুগ্ধ মন, হতাশা, দুনিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি এবং মন্দাচারে ধাবিত হওয়া- এসব কিছু অন্তর কঠিন হওয়ার আলামত।
কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমানি দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার উপায় উল্লেখ করা হলো-
নেককার মানুষের সঙ্গ :
এমন লোকদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, যাঁদের সংস্পর্শে গেলে আমল বেড়ে যায়। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১৯)।
কোরআন পাঠ :
বেশি পরিমাণে কোরআন তিলাওয়াত করুন, শুনুন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- ‘...আর যখন তাদের সামনে তাঁর (আল্লাহর) আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায়...।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ২)।
আল্লাহর জিকির :
বেশি পরিমাণে আল্লাহর জিকির করুন। কেননা দুর্বল ঈমানের সুস্থতার জন্য জিকির খুবই উপকারী। মুমিনের অন্তর জিকিরের মাধ্যমে প্রশান্ত হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমানদার এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রেখো, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরগুলো শান্তি পায়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)।
প্রকৃতি ও পৃথিবী নিয়ে ভাবনা :
প্রকৃতিতে আল্লাহর নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। আকাশে মেঘ দেখলে আরবরা খুশি হতো। কিন্তু মহানবী (সা.)-এর চেহারা আজাবের ভয়ে মলিন হয়ে যেত। কেননা সামুদ জাতি আজাব বহনকারী মেঘ দেখে রহমতের বৃষ্টি ভেবে ফুর্তিতে মেতেছিল। (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৯)।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আসমান ও জমিন সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন আছে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯০)।
ইসলামী বিধান প্রাধান্য দেওয়া :
সব কিছুতে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে প্রাধান্য দিন। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যার মধ্যে তিনটি গুণ থাকবে সে ঈমানের স্বাদ পাবে; ১. যে কাউকে ভালোবাসলে শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ভালোবাসবে; ২. আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় হবে এবং ৩. আল্লাহ তাকে কুফর থেকে পরিত্রাণ করার পর আবার কুফরিতে ফিরে যাওয়ার চেয়ে অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হওয়া তার কাছে পছন্দনীয় হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৮৭)।
আখিরাত নিয়ে ভাবনা :
আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার সামান্যতার কথা চিন্তা করুন। এর দ্বারা ঈমান বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পার্থিব জীবনের উদাহরণ তেমন, যেমন আমি আসমান থেকে পানি বর্ষণ করলাম, পরে তা মিলিত সংমিশ্রিত হয়ে তা থেকে জমিনের শ্যামল উদ্ভিদ বেরিয়ে এলো, যা মানুষ ও জীবজন্তুরা খেয়ে থাকে। এমনকি জমিন যখন সৌন্দর্য সুষমায় ভরে উঠল আর জমিনের অধিকর্তারা ভাবতে লাগল যে তারা এগুলোর ওপর ক্ষমতাবান। হঠাৎ করে তার ওপর আমার নির্দেশ এলো রাতে কিংবা দিনে, তখন সেগুলোকে কেটে স্তূপাকার করে দিল, যেন কালও এখানে কোনো আবাদ ছিল না। এমনিভাবে আমি চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য নিদর্শনগুলো খোলাখুলি বর্ণনা করে থাকি।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ২৪)।
পাপ বর্জন করা :
গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে ঈমান দুর্বল হয়। তাই গুনাহ ছাড়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করুন। কারণ মানুষের অন্তর ও ঈমানের ওপর গুনাহর অনেক নেতিবাচক প্রভাব আছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কোনো ব্যভিচারী মুমিন অবস্থায় ব্যভিচার করে না এবং কোনো মদ্যপায়ী মুমিন অবস্থায় মদপান করে না। কোনো চোর মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোনো লুটতরাজকারী মুমিন অবস্থায় এরূপ লুটতরাজ করে না যে যখন সে লুটতরাজ করে তখন তার প্রতি লোকজন চোখ তুলে তাকিয়ে থাকে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৪৭৫)।
আল্লাহর গুণবাচক নাম জানা :
আল্লাহর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে অজ্ঞতা ঈমানের কমতি অবধারিত করে দেয়। কারণ যে মানুষ আল্লাহর নাম ও গুণাবলি জানে না তার ঈমানে ঘাটতি থাকে। তাই আল্লাহর নাম, নামের অর্থ ও এর দাবি সম্পর্কে জানুন।
ইসলামকে জানা ও শেখা :
ইসলাম সম্পর্কে জানুন। কোরআন পড়ুন। নবীদের সিরাত, সাহাবায়ে কিরামের জীবনী পড়ুন। কেননা মহান আল্লাহ মহানবী (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের অন্তর প্রশান্ত করার জন্য পবিত্র কোরআনে নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। আর তিনি সাহাবায়ে কিরামের ঈমানকে আমাদের ঈমানের জন্য আদর্শ বানিয়েছেন।
এ মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...মানুষ যেভাবে ঈমান এনেছে তোমরাও সেভাবে ঈমান আনো...।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৩)।
দুই দিনের দুনিয়া নিয়ে ভাবনা :
দুনিয়ার অস্থায়িত্বের কথা বারবার ভাবুুন। দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমরা মানুষকে সৃষ্টি করেছি, তারপর তারা মৃত্যুবরণ করবে এবং কিয়ামতের দিন পুনরুত্থিত হবে।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১২-১৬)।
আর দুনিয়া পরীক্ষার জায়গা। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম কাজ করে, তা পরীক্ষা করেন।’ (সুরা : মুলক, আয়াত : ১-২)।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ