প্রায় ১৬ বছর পর একেবারেই ভিন্ন আবহে নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট পাস হচ্ছে আজ। অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকায় জাতীয় সংসদ কার্যকর নেই। ফলে অধিবেশনও নেই। প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে তেমন কোনো তর্কবিতর্ক কিংবা আলোচনাও নেই। শুধু কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ও অর্থনীতিবিদ প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে নানা রকমের মতামত তুলে ধরেছেন। এ ছাড়া সর্বসাধারণেরও অনলাইন মাধ্যমে মতামত দেওয়ার সুযোগ দিয়েছিল সরকার। যদিও তাতে খুব একটা সাড়া পড়েনি। প্রস্তাবিত বাজেটের কিছু বিষয়ে আপত্তি এলেও তেমন বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। তবে ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি, কালো টাকা সাদা করার সিদ্ধান্ত বহাল রাখা, আমদানি-রপ্তানিসহ কয়েকটি খাতে ছোটখাটো কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানা গেছে। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আজ রবিবার প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে নতুন এই বাজেট পাস করা হবে। তার আগে অর্থবিলে স্বাক্ষর করবেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
অর্থবিভাগ সূত্র জানায়, আজ সকালে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় প্রস্তাবিত ২০২৫-২৬ বাজেট পাস করা হবে। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী নতুন এই বাজেট কার্যকর করা হবে ১ জুলাই থেকে। প্রতি বছর বাজেট নিয়ে সংসদে তুমুল তর্কবিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্যে। এখন যেহেতু সংসদ কার্যকর নেই। তাই এ নিয়ে কোনো আলোচনাও নেই। এর আগে চরম আর্থিক সংকট এবং বিশৃঙ্খলা সত্ত্বেও অতীতের সরকারের মতোই ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বিশাল আকারের বাজেট ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। যেখানে ঘাটতি ধরা হয় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যদিও এ বাজেটের মোট আকার চলতি বাজেটের তুলনায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম। মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জীবনমান উন্নয়নের তেমন কোনো বিশদ পরিকল্পনার উল্লেখ নেই প্রস্তাবিত বাজেটে। যদিও বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘বৈষম্যহীন ও টেকসই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ার প্রত্যয়’। তবে বাজেটের আকার যা কমানো হয়েছে তা বাস্তবসম্মত নয় বলে মনে করে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, এজন্য চলতি বাজেটে বিশাল আকারের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের মতো বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। যা অতীতের সরকাররাও এভাবেই দিয়ে এসেছিল। এ ছাড়া ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক খেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেওয়া হবে। আমাদের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করবে।
ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, ডুবন্ত ব্যাংক ও সামগ্রিক আর্থিক খাতের সংস্কারে যেসব কার্যক্রম চলমান রয়েছে সেগুলো কবে নাগাদ শেষ হবে তারও কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা জানানো হয়নি প্রস্তাবিত এই বাজেটে। ২০২৬ সালের নভেম্বরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলাদেশ এলডিসি তালিকা থেকে বেরিয়ে যাবে। একের বৈশ্বিকভাবে রপ্তানির বাজারে বাংলাদেশকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে তারও কোনো নির্দেশনা নেই এই বাজেটে।