লবণ ও মাছ পরিবহন, বিপজ্জনক বাঁক, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, সরু ও পিচ্ছিল রাস্তা- সব মিলিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে।
এই সড়কের চুনতি এলাকার জাঙ্গালিয়া পয়েন্টে গত ছয় মাসে ৬৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৯ জন, আহত হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। আর গত এক বছরে পুরো সড়কজুড়ে প্রাণ গেছে ১৩০ জনের। কক্সবাজার থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন লাখ লাখ টন লবণ ও মাছ পরিপ্রণ করা হয় এই সড়ক দিয়ে। ট্রাক থেকে পড়া লবণপানি ও মাছের পানি রাস্তা পিচ্ছিল কওে তোলে, বিশেষ করে রাত ও ভোরে। এ কারণে প্রায়ই ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। বিশেষ করে জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট, কেরানীহাট, সাতকানিয়া ও চুনতি এলাকায় বাঁকসংকুল ও সরু রাস্তার কারণে ঝুঁঁকি অনেক বেশি। একমাত্র এপ্রিল মাসেই টানা তিন দিনে তিনটি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১৫ জন, আহত হন আরও ২৫ জন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন সময়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকে দিকচিহ্ন সংবলিত সাইনবোর্ড থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ স্থানেই কোনো চিহ্ন নেই। এ ছাড়া সাতকানিয়ার পর থেকে চুনতি অভয়ারণ্য পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ঘন জঙ্গল থাকার কারণে অনেক স্থানে বাঁক থাকলেও চালকদের চোখে পড়ে না। আবার এসব এলাকার অনেক স্থানে মূল সড়কটি মাত্র ২০-২৪ ফুটের। ফলে প্রায়ই এসব স্পটগুলোতে দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়।
চট্টগ্রাম সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৫৫ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ১০০ কিলোমিটারই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ৮৩ কিলোমিটারে রয়েছে ৩০টিরও বেশি বিপজ্জনক বাঁক। সাইনবোর্ড ও দিকনির্দেশনার অভাব, জঙ্গলে ঘেরা এলাকা ও সরু রাস্তা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী জামাল উদ্দিন জানান, জাঙ্গালিয়া পয়েন্টসহ কয়েকটি জায়গায় সড়ক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সিগন্যাল বোর্ডও স্থাপন করা হয়েছে, তবে সচেতন না হলে দুর্ঘটনা রোধ কঠিন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই মহাসড়কটি পরিকল্পনাহীনভাবে নির্মিত হওয়ায় বাঁক ও সরু রাস্তায় ভরপুর। এটি সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।’ হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. খাইরুল আলম বলেন, চালকদের গাফিলতি, ঘুম ও বেপরোয়া গতিও বড় কারণ। ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।