অস্তিত্বহীন কোম্পানির নামে প্রায় ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তার ছেলে, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডিসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অপ্রতুল জামানত ও জাল সাব-কন্ট্রাক্ট দেখিয়েও ঋণ নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথম মামলায় আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি থেকে প্রায় ৬৭৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২২ জন এবং দ্বিতীয় মামলায় ৪৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান ও ইয়াছির আরাফাত মামলা দুটি করেন। গতকাল বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসিতে প্রায় ৬১৮ কোটি টাকা জালিয়াতি, ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। কোনো সহায়ক জামানত বা সঠিক মূল্যায়ন ছাড়াই গত বছরের ২০ মার্চ এবং ১২ জুন পরিচালনা পর্ষদের দুটি সভায় মোট ৬১৮ কোটি ৯ লাখ ৩১ হাজার ৭৫ টাকা ৮৫ পয়সা বিতরণ করা হয়। ওই সব অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। যা সুদ-আসলে ৬৭৭ কোটি ৭৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা হয়েছে। এ ঘটনায় করা মামলায় আসামিরা হলেন- সালমান এফ রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক পরিচালক শাহ মনজুরুল হক, সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, আরএম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ, গোলাম মোস্তফা ও জাফর ইকবাল।
এছাড়াও আইএফআইসি ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মুনসুর মোস্তফা, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারোয়ার, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, তৎকালীন চিফ বিজনেস অফিসার নুরুল হাসনাত, ব্যাংকটির তৎকালীন চিফ ইনফরমেশন অফিসার মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, হেড অব ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সৈয়দ হাসনুজ্জামান, সাবেক হেড অব অপারেশন হেলাল আহমেদ, সাবেক ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ রিস্ক অফিসার ইকবাল পারভেজ চৌধুরী এবং তৎকালীন চিফ ম্যানেজার হোসাইন শাহ আলীকেও আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকটির শীর্ষ ঋণগ্রহীতা গ্রোয়িং কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলমগীর আলম চৌধুরী, চোয়া কনস্ট্রাকশনের পরিচালক সৈয়দা মুনিমা হোসেন, আইএফআইসির প্রিন্সিপাল শাখার অ্যাকটিং ইনচার্জ তাছলিমা আক্তার ও তৎকালীন রিলেশনশিপ ম্যানেজার সরদার মমিনুল ইসলামকেও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।
দুদক মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, দ্বিতীয় মামলায় ঋণ সুবিধা অপব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে ৪৯৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা আসল।
বাকিটা সুদ। এ মামলায় সালমান এফ রহমান ও তার ছেলে, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সার্ভ কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিডি নামের কাগুজে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সুলতানা মনামী, একই প্রতিষ্ঠানের এমডি মনিরুল ইসলাম, আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক পরিচালক রাবেয়া জামালী, আরএম নাজমুস সাকিব, কামরুন নাহার আহমেদ ও জাফর ইকবাল, তৎকালীন চিফ ম্যানেজার ও বর্তমানে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও হেড অব আইডি শাহ মো. মঈনউদ্দিন, সাবেক চিফ বিজনেস অফিসার ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক নূরুল হাসনাত, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অব আইটি মনিতুর রহমান, হেড অব ট্রেজারি মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, তৎকালীন রিলেশনশিপ ম্যানেজার ও বর্তমানে ম্যানেজার, নারায়ণগঞ্জ শাখা আবদুর রহমান এবং বেক্সিমকো গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজার (করপোরেট ফাইন্যান্স) কৌশিক কান্তি পণ্ডিতকে আসামি করা হয়েছে।
দুদক জানায়, দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাংকিং খাতে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে গত আগস্টে পৃথক অনুসন্ধান শুরু হয়। সালমান এফ রহমান ও অন্যদের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে জালিয়াতি, প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট, অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ঋণ গ্রহণপূর্বক আত্মসাতসহ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ রয়েছে।