দেশে বৈষম্য দূর করতেই শহীদরা আত্মত্যাগ করেছেন বলে মন্তব্য শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরারের। গতকাল ‘জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সময় তিনি একথা বলেন। জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) প্রশাসন। গতকাল উদ্বোধনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ক্যাফেটেরিয়ায় আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, গণ অভ্যুত্থানকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি টেকসই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। শহীদরা দেশের জন্য, বৈষম্য দূর করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের এ আত্মত্যাগ আন্দোলনকে বেগবান করেছে। সারা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছে তারা। আগামী ৩০ বছর পরও কোনো শিক্ষার্থী এ সংগ্রহশালায় ঘুরতে এলে তাদের মনে প্রশ্ন জাগবে, কেন এ তরুণরা জীবন দিয়েছেন। তখন তারা অনুধাবন করতে পারবেন।’
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। তিনি বলেন, আজকের এ অনুষ্ঠান ঋণ স্বীকারের উপলক্ষ মাত্র। জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালাটি সীমিত পরিসরে উদ্বোধন করলাম। ধীরে ধীরে এটিকে পূর্ণাঙ্গ জাদুঘরে পরিণত করা হবে। এ সংগ্রহশালা জাতীয় সম্পদ। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলাদলি ও হিংসাত্মক মনোভাব পরিহার করতে হবে। রাজনৈতিক দলাদলির কারণে এ বিষয়গুলোকে নষ্ট হতে দেব না। ১৯৬৯, ১৯৭১, ১৯৯০ এবং ২০২৪ প্রতিটি ঘটনার ধারাবাহিকতা রয়েছে। এগুলোকে মুখোমুখি করার দুরভিসন্ধি আমরা করতে দেব না।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) এবং ‘জুলাই স্মৃতি সংগ্রহশালা’ বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা। তিনি বলেন, গণ অভ্যুত্থান ও শহীদদের স্মৃতি ধরে রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শহীদদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সরবরাহ করে পরিবারগুলো এ সংগ্রহশালাকে সমৃদ্ধ করেছেন। সে জন্য তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, জুলাই গণ অভ্যুত্থানে শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা আলহাজ। শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া, শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শফিউল আলম, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, শহীদ আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক, ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধি এবং আহত শিক্ষার্থরা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
আলোচনা সভায় শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা আলহাজ শহীদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, আমার একমাত্র ছেলে ফাইয়াজ। তার সরকারি চাকরির কোনো ইচ্ছে ছিল না। তার পরও বৈষম্য দূরীকরণে চলা আন্দোলনে সে গিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সে রাস্তায় নেমেছিল। তাকে টার্গেট করে বুকের মাঝখানে গুলি করে হত্যা করা হয়। সুন্দর ও কাক্সিক্ষত বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে আমরা যেন তাদের রেখে যাওয়া স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে পারি, সে প্রত্যাশা করছি। শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাবা শফি আলম বলেন, আমার ছেলেকে প্যান্টের বেল্টের নিচ দিয়ে গুলি করে হত্যা করেছে। শুধু সরকারি চাকরি পাবে, সে জন্য ওয়াসিম আন্দোলন করেনি। আমরা বৈষম্যহীন একটি দেশ দেখতে চাই।
শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমার ছেলে ওইদিন শুধু পানি ও বিস্কুট বিতরণ করেনি। সে নিহতদের লাশ যাতে পুলিশ নিয়ে গিয়ে গুম করতে না পারে সেজন্য চেষ্টা করেছে। আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তাকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা চাই এসব হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত হোক। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুণœ থাকুক। কোনো কালো থাবা যাতে এ দেশের ওপর আর না পড়ে।
শহীদ আবু সাঈদের ভাই আবু হোসেন বলেন, তাদের আত্মত্যাগ মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। তারা যে বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছে সেটি যেন বাস্তবায়িত হয়। একই সঙ্গে আমরা চাই, আর যেন কোনো ন্যায্য বিষয়ের জন্য কাউকে রাস্তায় নামতে না হয়, সে ব্যবস্থা করা হোক।