ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়োগ পদোন্নতির ক্ষেত্রে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মতামত নিতে হয়। পিএসসি প্রতিনিধি হিসেবে সার্বিক খুঁটিনাটি ভুল ধরার কাজ করতে গিয়ে অনেকেই বাড়তি খবরদারিও করে থাকেন অন্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের ওপর। তবে নিজস্ব জনবলের পদোন্নতিতে নিয়ম মানছে না সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৮ সালে পিএসসি কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা হলেও গত ১৬ বছরে মানা হয়নি সেই বিধিমালা।
জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দাবি উঠে পিএসসি সংস্কারের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোরহাব হোসাইনের নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিলুপ্তি ঘটিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যাপক ড. মোবাশ্বের মোনেমকে। পিএসসিতে সরকার থেকে হাতেগোনা কয়েকজন ক্যাডার কর্মকর্তা প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর বাইরে নিজস্ব নিয়োগ পাওয়ারাই পদোন্নতির মাধ্যমে বিভিন্ন পদে পরিচালক, উপপরিচালক, সহকারী পরিচালকসহ অন্যান্য উচ্চতর গ্রেডে দায়িত্ব পালন করছেন।
পিএসসি সূত্র জানায়, অনেকে তৃতীয় দ্বিতীয় শ্রেণিতে (অফিস সহকারী, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা) নিয়োগ পেয়ে পদোন্নতি পেয়ে পঞ্চম, ষষ্ঠ গ্রেডে অর্থাৎ প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হয়েছেন। তবে বিভাগীয় কোনো পরীক্ষা দিতে হয়নি। বর্তমানে কমিশনের ১৭ জন পরিচালক ৩০ জনের মতো উপপরিচালক ৩০ জনের বেশি সহকারী পরিচালক রয়েছেন। যাদের ক্যাডার কর্মকর্তা ছাড়া বাকি নন-ক্যাডার সবাই পরীক্ষা ছাড়া, কোনো ধরনের মৌলিক প্রশিক্ষণ ছাড়া দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের পালন করা দায়িত্ব নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছে তেমনি বিধিবহির্ভূত পদোন্নতি পেয়ে সরকারের অর্থ নষ্ট করার কারণেও প্রশ্ন রয়েছে। ড. সা’দত হুসাইন চেয়ারম্যান থাকাকালীন ২০০৮ সালে পিএসসির নিয়োগ বিধি হলেও এরপরে আরও চারটি কমিশনের কেউ বিধি মোতাবেক কোনো উদ্যোগ নেননি। সূত্র আরও জানায়, পিএসসির নিয়োগ কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখা একটি ক্যাডার অন্যটি নন-ক্যাডার। দুটি শাখার প্রধান হিসেবে মাসুমা আফরীন, দিলাওয়েজ দুরদানা মনোবিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন পরীক্ষা ছাড়া, প্রশিক্ষণ ছাড়া পদোন্নতি নিয়ে বসে আছেন গুরু দায়িত্বে। তারা সারা দেশের ক্যাডার, নন-ক্যাডার নিয়োগের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন! প্রতিষ্ঠানটির আইন উপদেষ্টা হিসেবে একজন ডিএস থাকার কথা থাকলেও আইন মন্ত্রণালয় জেলা ও দায়রা জজ মর্যাদার ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেন সেটি নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। আবার একই অধিশাখায় আইন কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন ৬ষ্ঠ গ্রেডের হয়ে। যথাযথ প্রশিক্ষণ অফিস ম্যানেজমেন্ট জ্ঞান না থাকার কারণে অনেকে শাখা ও ইউনিটের কাজ বিলম্বিত হয়। এসব নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের নামে নানা অভিযোগও পাওয়া যায়। বিশেষ করে অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভাগীয় পদোন্নতির মিটিং (ডিপিসি) গিয়ে পদোন্নতির নামে নানা আইনকানুন দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধার কথাও রয়েছে। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসভুক্ত ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস করতে হয়। তবে পিএসসির নিজস্ব নিয়োগে সে প্রক্রিয়া এখনো শুরুই হয়নি। বিষয়টি জানার পর বর্তমান কমিশন উদ্যোগ নিয়েছেন পরীক্ষা ছাড়া আর কোনো পদোন্নতি না দিতে। এটি জানার পর ভিতরে ভিতের ফুঁসছেন পিএসসিতে নিয়োগ পাওয়ারা। পিএসসির নিয়োগ বিধিতে ৬ এর ৪ ধারায় বলা আছে কোনো শিক্ষানবিশকে কোনো পদে স্থায়ী করা হবে না যতক্ষণ তিনি বিভাগীয় পরীক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থায় উত্তীর্ণ না হবেন। অথচ গত ১৬ বছরে নিয়ম লঙ্ঘন করে সরাসরি নিয়োগ প্রাপ্তদের পরীক্ষা প্রশিক্ষণ ছাড়াই শুধু চাকরি স্থায়ীই নয়, পদোন্নতিও পেয়েছেন। সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমান কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে কারণে সিলেবাস করতে কমিটি করা হয়েছে। সেই কমিটি আরও একটি সাব কমিটি করছে প্রস্তাব তৈরি করতে। নিয়োগ বিধিমালা হওয়ার পরেও হয়নি এটা স্পষ্টই নিয়মের লঙ্ঘন। এজন্য এই কমিশন এখনো কোনো পদোন্নতি দেয়নি। আগের কমিশন কেন এটি করেনি, সে সময়ের সচিব কেন দৃষ্টিতে আনেননি সেটা বলতে পারব না। বিভাগীয় পরীক্ষা ছাড়া পদোন্নতি, সরকারের অর্থ হাতিয়ে নেওয়া বিধিবহির্ভূত কি না জানতে চাইলে সচিব বলেন, যেহেতু সরকারের করা বিধি প্রতিষ্ঠানই পালন করেনি সেটা তো অবশ্যই বিধিবর্হিভূত, এটা উচিত ছিল। পিএসসি প্রিমিয়ার প্রতিষ্ঠান। এখানে পরীক্ষার পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দুই থাকতে হবে। যোগ্য করে রাখতে হবে কর্মকর্তাদের কারণ ক্যাডার নন-ক্যাডার নিয়োগ পদোন্নতি সব মন্ত্রণালয় বিভাগে পিএসসি মতামত লাগে। সেখানে মত দিতে গেলে নিজেকে সেভাবে গড়তে হবে যেন কেউ প্রতিনিধির দিকে প্রশ্ন না তুলে।