কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে শাহরিয়ার অন্নব রিউশা (১৭) নামে এক ছাত্রের আগুনে পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সকাল ৬টার দিকে উপজেলার চাপড়া ইউনিয়নের সিংদাহ গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি পুকুর থেকে লাশটি উদ্ধার করেন স্বজনরা। এরপর দুপুরে খবর পেয়ে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। সে ওই গ্রামের সোহেল রানার ছেলে।
স্বজনদের দাবি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত রিউশা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্তত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছে। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ হয়নি। এ নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। তাদের ভাষ্য, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছে রিউশা। পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অত্যন্ত মেধাবী ও বিনয়ী ছাত্র রিউশা কুষ্টিয়া এডুকেয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পাস করে ঢাকার রামপুরা এলাকায় খালার বাড়িতে চলে যায়। সেখানে ঢাকা কলেজ থেকে ২০২৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ প্রাপ্ত রিউশা ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে পরীক্ষা দেয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়। সর্বশেষ ২৭ এপ্রিল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়। তবে একটিতেও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে একাকী জীবন কাটাচ্ছিল। স্বজনরা তাকে মানসিক শক্তি বাড়ানোর জন্য সাহস দিয়ে আসছিলেন।
তারা আরও জানান, শুক্রবার ঢাকা থেকে বাড়িতে আসে রিউশা। সেখানেও মানসিক অস্বস্তিতে ভুগছিল। গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মা মুক্তা খাতুন তার বাবার বাড়িতে রিউশার জামাকাপড় আনতে গিয়েছিলেন। এরপর রাত সোয়া ৯টা থেকে রিউশাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানেও খুঁজে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে গতকার সকাল ৬টার দিকে বাড়ি থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে একটি ডোবা পুকুরে পোড়া ও বিবস্ত্র অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করেন স্বজনরা।
রিউশার আইনজীবী খালা রত্না খাতুন বলেন, চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও ভর্তি হতে পারেনি। এজন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। আমরা ওকে সাহস দিতাম। তার ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে হয়তো শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
চাচা ইকবাল বিশ্বাস বলেন, বাগানে থাকা পরিত্যক্ত টিনশেড ঘর ও পুকুরপাড়ে আগুনের ছাই এবং প্যান্টের পোড়া অংশবিশেষ পড়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে গায়ে পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যা করেছে।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আগুনে পোড়া এক ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে।