বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ১ হাজার শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতাল উপহার দিচ্ছে চীন। উত্তরবঙ্গের নীলফামারী মেডিকেল কলেজের পাশে এ হাসপাতালের জন্য ১৬ একর জায়গার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। কিন্তু নিজ এলাকায় হাসপাতাল করার দাবিতে সরব অবস্থানে উত্তরবঙ্গের অন্য এলাকার জনগণ এবং বিভিন্ন দলের নেতারা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর বলেন, ‘নীলফামারী মেডিকেল কলেজের পাশে ১৬ একর জায়গা দেখা হয়েছে। এ জায়গার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটা টিম ঘুরে এসেছে। তবে এটা এখনো আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে, চূড়ান্ত হয়নি। চীনের একটা দাবি আছে বিমানবন্দরের কাছাকাছি হাসপাতাল করার। এজন্য এ জায়গাটার কথা ভাবা হয়েছে।’
দেশের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ায় চিকিৎসার জন্য ঢাকামুখী রোগীর স্রোত কমছে না। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (পঙ্গু হাসপাতাল), নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনস্টিটিউট, ক্যান্সার ইনস্টিটিউট হাসপাতালে তিল ধারণের জায়গা নেই। হাসপাতালে শয্যার তুলনায় কয়েক গুণ রোগী ভর্তি থাকে সব সময়। এসব হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) শয্যা যেন সোনার হরিণ। উত্তরবঙ্গ কিংবা এ রকম দূরের জেলা থেকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা আসতে পথেই ঝরে যায় অনেক প্রাণ, অনেক সময় রোগীর অবস্থা আরও অবনতি হয়। এ পরিস্থিতি থেকে বের হতে চিকিৎসা বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা ছিল দীর্ঘদিনের। চীনের বিনিয়োগে এক হাজার শয্যার তিনটি সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যার একটি দেশের উত্তরাঞ্চলে, একটি চট্টগ্রামে এবং একটি ঢাকার বাইরে হবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে চীন ১৩৮ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা প্রদান করবে বলে জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ঢাকার ধামরাইতে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল নির্মাণে চীন সম্মতি দিয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছিলেন। গত ২৬ এপ্রিল চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলায় ৫০০ শয্যার হাসপাতালের সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা। এর মধ্যে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় দুটি স্থান, কর্ণফুলী উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন এলাকায় একটি এবং হাটহাজারী উপজেলার ফটিকা ও মিঠাই ছড়া মৌজায় নতুন হাসপাতাল নির্মাণের সম্ভাব্য আরেকটি স্থান পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা মুজাহেরুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বৈদেশিক সহায়তায় হাসপাতাল নির্মাণের এ পরিকল্পনাকে আমরা স্বাগত জানাই। এতে প্রাযুক্তিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়। দেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা এসব উন্নত প্রযুক্তিতে নিজেদের দক্ষ করে তোলার সুযোগ তৈরি হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণত রাজনৈতিক বিবেচনায় হাসপাতালের স্থান নির্বাচন করতে দেখেছি। উদাহরণ হিসেবে মানিকগঞ্জের দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে বিশাল শয্যার তিনটি হাসপাতাল। কোথায় হাসপাতাল করলে বেশি মানুষ সেবা পাবে সেই প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে হাসপাতালের জায়গা নির্বাচন করা উচিত।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুটি স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানিও হাসপাতাল নির্মাণে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তত্ত্বাবধানে ইতোমধ্যে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বিদেশি বিনিয়োগ সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো বর্তমানে বাস্তবায়নের বিভিন্ন স্তরে রয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এসব হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের ‘মাল্টি-সুপার স্পেশালিটি সেন্টার’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে ক্যান্সার, হৃদরোগ, নিউরোলজি, অর্থোপেডিকস, কিডনি, লিভার ট্রান্সপ্লান্টসহ প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা সুবিধা থাকবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘চীনের বিনিয়োগে তিনটি বিশ্বমানের হাসপাতাল ঢাকার বাইরে দেশের অন্য জেলায় করা হলে ওই এলাকার মানুষদের কাছে উন্নত সেবা পৌঁছাবে। চিকিৎসার জন্য সবাইকে ঢাকায় আসতে হবে না। কিন্তু শুধু হাসপাতাল বানালে হবে না ব্যবস্থাপনা এবং সেবাতেও দক্ষতা বাড়াতে হবে।’