শেখ হাসিনার সাবেক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তাঁর স্ত্রী সৈয়দা রুবাবা রহমান, ভাই আহমেদ সোহাইল ফসিহুর রহমান, ছেলে আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং আহমেদ সোহাইলের ছেলে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। এ ছাড়া দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্যরা হলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম আবদুস সোবহান, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক এমপি মো. আয়েন উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রী এলিনা আক্তার পলি, নেত্রকোনা-৩ আসনের সাবেক এমপি ইফতেখার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু, তাঁর স্ত্রী ইসমত আরা মিনু, তাঁদের মেয়ে সুমাইয়া মৌরমি ইফতি, সাইবা মৌরমি ইশমা ও ইবনাম ইফতিকার।
দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ চেয়ে আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এদিকে সালমান এফ রহমানের নামে লন্ডনে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে বিদেশি দুটি ব্যাংক হিসাব ও কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে দুদকের উপপরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন এ আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
এস আলম পরিবারের ৩৩,২১৬ শতাংশ জমি ক্রোকের নির্দেশ : ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৯৭টি সম্পত্তির ৩৩ হাজার ২১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর সিনিয়র বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব গতকাল এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রামের এসব জমি ক্রোকের জন্য দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক আদালতে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তদন্ত চলছে। তাতে দেখা গেছে, তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ‘অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন এবং দেশে-বিদেশে বিপুল সম্পদ অর্জন’ করেছেন। তারা এসব সম্পদ হস্তান্তর বা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন। যদি তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এই সম্পদ স্থানান্তরিত হয়ে যায়, তাহলে তা উদ্ধার করা কঠিন হবে। তাই মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সম্পদ অবিলম্বে ক্রোক করা জরুরি।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ তার পরিবারের ১২ সদস্যের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
আর গত ১৬ জানুয়ারি এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ৩ হাজার ৫৬৩ কোটি ৮৪ লাখ ২১ হাজার টাকার শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়।
এ ছাড়া তাদের নামে থাকা ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা দামের ১৭৫ বিঘা সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হয় গত ৩ ফেব্রুয়ারি।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি তাদের ৪৩৭ কোটি ৮৫ লাখ ২ হাজার ২৭৪টি শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেয় আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৫ হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
ওরিয়ন গ্রুপের ৪৩ একর জমি জব্দ, ২০ কোটি টাকা অবরুদ্ধ : দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন থাকায় ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান, তাঁর পরিবারের সদস্য ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে ময়মনসিংহ ও মুন্সিগঞ্জ জেলায় থাকা ৪৩ দশমিক ২৫ একর জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। ২০টি পৃথক দলিলে থাকা এসব জমির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ৯১ হাজার টাকা। যদিও বাস্তবমূল্য বহু গুণ বেশি হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। এ ছাড়াও অভিযুক্তদের নামে রাজধানীর গুলশান এলাকায় থাকা প্রায় ৪ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ফ্ল্যাটটির দলিলমূল্য দেখানো হয়েছে ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা ৩১টি হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৯টি ব্যাংক হিসাবে ২০ কোটি ২৬ লাখ ৮০ হাজার ৬৫৮ টাকা রয়েছে বলে দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও সিটি ব্যাংকের অপর দুটি হিসাবে থাকা ৬ হাজার ৫৭৫ ডলারও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের পৃথক দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁসের হোতার স্ত্রীর ৩৪ বিঘা জমি জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ : মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা জসিম উদ্দিন ভূইয়া মুন্নুর স্ত্রী শারমীন আরা জেসমিনের ৩৪ দশমিক ৩৯ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে রয়েছে, ৮১০ শতাংশ জমির ওপর বাগানবাড়ি, তিন ও চার তলার দুটি বাড়ি, ১২ হাজার বর্গফুটের টিনশেড ও আট তলার বাণিজ্যিক ভবন। এ ছাড়া তাঁর ৬টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৫ লাখ ৮২ হাজার ২২৯ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, দুদকের পক্ষে উপপরিচালক কে এম আসাদুজ্জামান অবরুদ্ধ ও জব্দ চেয়ে আবেদন করেন। পরে বিচারক সেটি মঞ্জুর করেন।