পশ্চিম পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের শোষণ-বঞ্চনার কারণে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ। ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমানের ঘোষণার আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্ব মনে করত এটা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু তাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি প্রাণ ফিরে পায়। দেশে-বিদেশে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। আমার নিজের একটা দেশ হবে- এই ভেবে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। স্বাধীন সেই দেশে নিপীড়ন-নির্যাতন থাকবে না। গণতন্ত্র থাকবে। ভোটের অধিকার থাকবে। স্বাধীন দেশের যেসব উপাদান ও সুযোগসুবিধা থাকা উচিত, সেগুলো ভোগান্তি ছাড়া প্রতিটি নাগরিক উপভোগ করবে- এটিই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মুখ্য বিষয়।
রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সব চেতনা ধ্বংস করে দিল। সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন কায়েম করল। সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র চারটি পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি দেওয়া হলো। জনগণ চরম দুর্ভোগে পড়ল। অর্থনীতি ধ্বংস করে দেওয়া হলো। দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। খাবার না পেয়ে মানুষ মরতে থাকল। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির দোহাই দিয়ে ’৭২-’৭৫ সময়কালে আওয়ামী লীগ আধিপত্যবাদের পক্ষে কাজ করেছে। স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি, স্বাধীন সংস্কৃতি, শিক্ষাব্যবস্থায় নিজেদের সংস্কৃতি- কোনোটিই তাদের কারণে হলো না। আমরা পিন্ডির থেকে দেশ স্বাধীন করে দিল্লির অধীন হয়ে পড়লাম। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ ব্যবসা করেছে। প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের পরিবর্তে পরিবারতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এ কারণেই তারা ’৭২ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গত ১৫ বছরও তারা জনবিচ্ছিন্ন ছিল। ফলে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগকে বিদায় নিতে হয়েছে। ৫ আগস্ট গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা বিদায় নিলেন। মানুষের মৌলিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি, সামাজিক ন্যায়বিচার, সাম্য প্রতিষ্ঠা- এগুলোর একটাও আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের পর হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন থেকে আওয়ামী লীগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বলেই বিএনপির জন্ম হয়েছিল। একাত্তরের ২৫ মার্চ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়েছিল বলেই জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব। পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের আগে এ দেশে গণতন্ত্র চরমভাবে বিঘ্নিত হয়েছিল। আমাদের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। সেই পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর আবারও শহীদ জিয়ার আবির্ভাব ঘটেছিল। তিনি আসার পর মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন, যে সাধ কিছুটা হলেও তিনি জনগণকে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। এ কারণেই বাংলাদেশের ইতিহাসে ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর যেমন গুরুত্বপূর্ণ ঠিক তেমনি ৭ নভেম্বরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। পঁচাত্তরের সেই ৭ নভেম্বর যদি না ঘটত তাহলে সে সময়ই আধিপত্যবাদের অপশক্তির করায়ত্তে দেশ চলে যেত।
লেখক : আবদুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সদস্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, বিএনপি