এখন ইন্টারনেটের যুগ। যেকোনো পণ্যের বিজ্ঞাপন সহজে মানুষের কাছে পৌঁছানোর অন্যতম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। তাইতো মোটামুটি সব ব্যবসার প্রচারেই ইন্টারনেটের ব্যবহার প্রাধান্য পাচ্ছে। বাদ যায়নি কোরবানির পশুও। বিক্রির উদ্দেশ্যে রাখা কোরবানির পশুর বিজ্ঞাপন মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে বিক্রেতারা নিচ্ছে নানা উদ্যোগ। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে উচ্চ মূল্যে পশু বিক্রির আশায় অবলম্বন করছে নানা অভিনব পদ্ধতি। তবে এই অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করতে গিয়ে এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা কোরবানির মতো একটি মহৎ ইবাদতের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করা একটি পশুর সঙ্গে করা বেমানান।
যেমন অনেকে তাদের কোরবানির পশুকে দ্রুত ভাইরাল করার আশায় বিভিন্ন উদ্ভট নাম দেয়, বিভিন্ন তারকার নাম কিংবা ভাইরাল ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নাম দিয়ে তাদের পশুকে আলোচনায় আনতে চায়। প্রশ্ন হলো, কোরবানির পশুকে এমন উদ্ভট নাম দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত! কারণ কোরবানির পশু আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন, ইসলামের শিআর। তার সঙ্গে এমন কোনো আচরণ করা উচিত নয়, যা পরোক্ষভাবে ইসলামের শিআর নিয়ে ঠাট্টা করার নামান্তর হয়।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই। (সুরা হজ, আয়াত : ৩২)
অর্থাৎ তাকওয়ার দাবি হলো, ইসলামের নির্দশন বহন করে এমন জিনিসের প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করে এমন আচরণ থেকে বিরত থাকা। আর আল্লাহর কাছে কোরবানির ক্ষেত্রে তাকওয়ার মূল্যায়নই সবচেয়ে বেশি। তাই কোরবানির পশু বেচাকেনা থেকে শুরু করে কোরবানি করা ও গোশত বন্টন ইত্যাদিতে তাকওয়ার ছাপ থাকা উচিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কোরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি; তোমাদের জন্য তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থায় সেগুলির উপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ কর যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায় তখন তা থেকে খাও। যে অভাবী, মানুষের কাছে হাত পাতে না এবং যে অভাবী চেয়ে বেড়ায়-তাদেরকে খেতে দাও। এভাবেই আমি ওগুলোকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি; যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। আল্লাহর কাছে পৌঁছে না এগুলোর গোশত ও রক্ত; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদের হিদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সত্কর্মশীলদের সুসংবাদ দাও।' (সুরা হজ, আয়াত : ৩৬-৩৭)
বিপদের কথা হলো, কেউ যদি জেনে শুনে ইসলামকে বা আল্লাহর বিধানকে উপহাস করার জন্য এমন করে, তবে তার ঈমান পর্যন্ত চলে যেতে পারে। কেননা ইসলামের মৌলিক নিদর্শন অস্বীকার কিংবা তা নিয়ে উপহাস করলে ঈমান থাকে না। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে এসেছে, বলুন, তোমরা কি আল্লাহর আয়াতসমূহ ও রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? তোমরা ওজর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরি করেছ। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৬৬)
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব কাজ প্রত্যক্ষভাবে ইসলামকে কটাক্ষ করার উদ্দেশ্যে না করা হলেও কোনো না কোনো ব্যক্তিকে অবশ্যই কটাক্ষ করা হয়, যা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে।
কোরবানি করতে হয়, একমাত্র আল্লাহর জন্য। মহান আল্লাহ বলেছেন, বল, নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য, যিনি সকল সৃষ্টির রব’। তাঁর কোন শরীক নেই এবং আমাকে এরই নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আর আমি মুসলমানদের মধ্যে প্রথম’। (সুরা আনআম, আয়াত : ১৬২-১৬৩)
লোক দেখানো কিংবা ভাইরাল হওয়ার আশায় কোরবানি করাতে কোনো উপকার নেই। যেসব পশু বিদ্রুপাত্মক নাম রাখার কারণে ভাইরাল হয়েছে, সেগুলো কিনে বাড়ি আনলেও তা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হবে, অনেক উঠতি কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা তা নিয়ে প্রচার করতে আসবে। প্রতিবেশীদের মাঝেও এই পশু নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়বে, যা কোরবানিকারীর মনে অহংকার ও প্রচারপ্রিয়তার উদ্রেক ঘটানোর আশঙ্কা খুব বেশি। তাই কোরবানির উদ্দেশ্যে রাখা পশুর বিদ্রুপাত্মক নাম রাখা যেমন অনুচিত, তেমনি এসব প্রাণী ক্রয় করাও তাকওয়ার দাবি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই