১৯ হিজরিতে দ্বিতীয় খলিফা উমর (রা.) রোমানদের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী পাঠান। ওই বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে হুজাফা (রা.)। রোমান সৈন্যদের হাতে তিনি বন্দি হন। পরে তাঁকে রোমান সম্রাট কায়সারের সামনে হাজির করা হয়।
সম্রাট দীর্ঘক্ষণ তাঁর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘আমার একটি প্রস্তাব আছে, যদি মেনে নাও, তোমাকে মুক্তি দেব এবং সম্মানিত করব। প্রস্তাব হলো, তুমি ইসলাম ত্যাগ করে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করো।’
আবদুল্লাহ (রা.) বললেন, ‘আফসোস! এর চেয়ে হাজারবার মৃত্যু আমার কাছে প্রিয়।’
সম্রাট বলল, ‘তুমি বুদ্ধিমান লোক।
আমার প্রস্তাব মেনে নিলে তুমি হবে আমার ক্ষমতার অংশীদার, আর জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পাবে আমার কন্যাকে।’
আবদুল্লাহ (রা.) মৃদু হেসে বলেন, ‘আল্লাহর কসম! শুধু আপনার সাম্রাজ্য নয়, এর সঙ্গে আরবদের সব অধিকারও যদি আমাকে দেওয়া হয়, তবু এক মুহূর্তের জন্য আমি মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বিন ত্যাগ করব না।’
সম্রাট বলল, ‘তাহলে আমি তোমাকে হত্যা করব।’
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘আপনার ইচ্ছা।’
সম্রাটের নির্দেশে তাঁকে দুই হাতে ঝুলিয়ে শূলকাষ্ঠে বেঁধে আবারও প্রস্তাব দেওয়া হলো খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের। তিনি অস্বীকার করলেন। এরপর পায়ে বেঁধে উল্টো করে ঝোলানো হলো। এ অবস্থায়ও ইসলাম ত্যাগের প্রস্তাব দিলে তিনি অটল থাকলেন।
সম্রাট জল্লাদকে বলল, ‘নামাও তাকে শূলকাষ্ঠ থেকে।
বড় কড়াইয়ে তেল ঢেলে আগুনে বসাও।’ তেল ফুটে উঠলে দুই মুসলিম সৈন্য আনা হলো। তাদের একজনকে ফুটন্ত তেলে ফেলে দেওয়া হলো। সঙ্গে সঙ্গে তার দেহ ভুনা হয়ে গেল।
এরপর সম্রাট আবারও বলল, ‘ইসলাম ত্যাগ করো, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করো।’ আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘অসম্ভব।’ তাঁকে ফুটন্ত তেলের কাছে আনা হলো। তখন তাঁর চোখে অশ্রু ঝরল।
জল্লাদরা বলল, সম্রাট, বন্দি কাঁদছে। সম্রাট ভেবেছিল, মৃত্যু ভয়ে কাঁদছে। তাই শেষবারের মতো আবার প্রস্তাব দিল ইসলাম ত্যাগের। কিন্তু তিনি অস্বীকার করলেন।
সম্রাট জিজ্ঞাসা করল, ‘তাহলে কাঁদছ কেন?’
আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, ‘মৃত্যুর ভয়ে নয়, কাঁদছি এ জন্য যে আজ বুঝি আমি দ্বিনের জন্য একটি প্রাণই বিসর্জন দেব। যদি আমার দেহের লোমের সংখ্যার সমান প্রাণ থাকত এবং তা দ্বিনের জন্য বিসর্জন দিতে পারতাম!’
সম্রাট বলল, ‘তোমাকে আমি এমনিই ছাড়তে পারি না। অন্তত আমার কপালে একটি চুমু দাও, তবেই মুক্তি দেব।’
আবদুল্লাহ (রা.) বললেন, ‘না। তবে যদি সব মুসলিম বন্দিকে মুক্তি দাও, তাহলে রাজি।’
সম্রাট রাজি হলো। তখন তিনি এগিয়ে গিয়ে সম্রাটের কপালে চুমু খেলেন।
ফলে ৮০ জন মুসলিম বন্দিকে আবদুল্লাহ (রা.)-এর হাতে তুলে দিয়ে মুক্তি দেওয়া হলো।
তিনি তাঁদের নিয়ে মদিনায় ফিরে খলিফা উমর (রা.)-এর দরবারে উপস্থিত হলেন এবং সব ঘটনা বর্ণনা করলেন। উমর (রা.) আনন্দিত হয়ে বন্দিদের উদ্দেশে বললেন, ‘তোমাদের উচিত আবদুল্লাহর মাথায় চুমু খাওয়া।’ এই বলে নিজেই সবার আগে তাঁর মাথায় চুমু খেলেন।
(উসদুল গাবাহ, ৩/১০৮-১০৯; মুখতাসার তারিখে দিমাশক, ১২/১০৫-১০৬; হায়াতুস সাহাবা, ১/৩০২; আল-ইসাবাহ, ২/২৯৬-২৯৭; আল-ইস্তিআব; সুয়ারিম মিন হায়াতিস সাহাবা, ১/৫১-৫৬; উসদুল গাবাহ, ৩/১৪৩ সূত্র : আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, পৃষ্ঠা-৭৯-৮০)
বিডি প্রতিদিন/হিমেল