ইসলামী শরিয়তের মূলনীতি হলো, প্রতিটি ওই বিষয়, যেখান থেকে বৈধভাবে উপকৃত হওয়া যায়, সেটির ব্যবসা করা জায়েজ আছে। (আল ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৪/২১৭)
মূল কথা হলো, যে বস্তু দ্বারা হারাম ও হালাল উভয় কাজ করার সুযোগ আছে, তা কাউকে প্রদান করা, বিক্রি করা সবই জায়েজ। আর যেহেতু ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভালো ও মন্দ উভয় কাজ করা যায়। তাই এর ব্যবসা জায়েজ আছে।
এরপর যদি ক্রেতা গুনাহের কাজ করে, তাহলে এর জন্য দায়ী হবে গুনাহকারী ব্যক্তি।
এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় লক্ষণীয়—
এক. সব ব্যবসা মূলত মুবাহ (বৈধ), যদি এতে সরাসরি (বিআইনিহি) হারামের স্পষ্ট উপাদান না থাকে। এ হিসেবে ব্রডব্যান্ড ও ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবসা জায়েজ।
দুই. যে জিনিসের মালিকানা বৈধভাবে লাভ করা যায়, তা বিক্রির ক্ষেত্রে মালিকের পূর্ণ ক্ষমতা থাকা জরুরি। মালিক যেভাবে ইচ্ছা বিক্রি করতে পারবেন। (আল-বিনায়া : ৮/২১৯)
তিন. যেখান থেকে বৈধভাবে উপকৃত হওয়া যায়, সেখানে সহযোগিতা, ক্রয়-বিক্রয় বৈধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য করো। পাপ ও সীমা লঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা কোরো না। আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ২)
চার. যদি নিশ্চিত জানা থাকে যে লোকটি ইন্টারনেট ব্যবহার করে শুধু গুনাহের কাজই করবে, তাহলে তার কাছে বিক্রয় করা জায়েজ হবে না। যেমন—সাধারণভাবে আঙুর বিক্রি করা জায়েজ, তবে যে ব্যক্তি মদ প্রস্তুতকারী হিসেবে পরিচিত, তার কাছে আঙুর বিক্রি করা (মুসলমানদের জন্য) জায়েজ নয়। আবার সাধারণ অবস্থায় ছুরি বিক্রি করা জায়েজ, কিন্তু যার সম্পর্কে এটা জানা যায় যে সে ছুরি দিয়ে মানুষ খুন করবে, তার কাছে ছুরি বিক্রি করা জায়েজ নয়।
ইসলামিক আইনের দৃষ্টিতে এটি হলো সাদ্দুজ জারায়ে বা মন্দ কাজের পথ রুদ্ধ করা।
এটা সত্য যে ইন্টারনেট ব্যবহার করে বহু মানুষ নানা অপকর্ম করছে; কিন্তু এর মাধ্যমে বহু উপকার সাধন করার সুযোগ আছে এবং অনেকে সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বিষয়ে দ্রুত তথ্য ও জ্ঞান অর্জন করতে পারি। জ্ঞানার্জন ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ।
ইন্টারনেট আমাদের অনলাইনে কেনাকাটা, ব্যাংকিং এবং বিভিন্ন ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করার সুযোগ দেয়। ই-কমার্সের মাধ্যমে আমরা ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারি। ইন্টারনেটে বৈধ পদ্ধতিতে বৈধ লেনদেন করতে কোনো অসুবিধা নেই। তাই ঢালাওভাবে ইন্টারনেট ব্যবসা, ব্রডব্যান্ড বা ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবসা করা অবৈধ বলা উচিত নয়।
কিন্তু তাকওয়ার দাবি হলো, এ ক্ষেত্রে যথাসম্ভব নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা। কেননা আপনি নিশ্চিত হতে পারছেন না ওয়াই-ফাই কোনো হারাম বা নিষিদ্ধ কাজে ব্যবহার করা হবে কি না। তাই উত্তম হচ্ছে এ ধরনের ব্যবসায় নিজেকে না জড়ানো।
সারকথা হলো, ব্রডব্যান্ড বা ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবসা সাধারণ বিবেচনায় জায়েজ। কারণ এটি একটি সেবা। আর যেখানে মানব কল্যাণ আছে, তা বৈধ। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তিনি (আল্লাহ) পৃথিবীর সব কিছু সৃষ্টি করেছেন তোমাদের (কল্যাণের) জন্য...।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৯)
তবে তাকওয়ার বিচারে কেউ এটিকে এড়িয়ে চলতেই পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয়ই আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ২-৩)
বিডি প্রতিদিন/কেএ