কোনও মুসলমান দাওয়াত দিলে তার দাওয়াত কবুল করা মুসলমানের হকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, এক মুসলমানের প্রতি অন্য মুসলমানের হক ছয়টি।
প্রশ্ন করা হলো সেগুলো কী-হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, সেগুলো হলো- ১. কারো সঙ্গে তোমার দেখা হলে তাকে সালাম করবে, ২. তোমাকে দাওয়াত করলে তা তুমি কবুল করবে, ৩. সে তোমার কাছে ভালো উপদেশ চাইলে, তুমি তাকে ভালো উপদেশ দেবে, ৪. সে হাঁচি দিয়ে ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বললে, তার জন্য তুমি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ’ বলে রহমতের দোয়া করবে, ৫. সে পীড়িত হলে তার সেবা করবে এবং ৬. সে মৃত্যুবরণ করলে তার (জানাজার) সঙ্গে যাবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৫৪৪)।
এমনকি দ্বিনি স্বার্থ থাকলে অমুসলিমের দাওয়াতও কবুল করা যায়। কেননা মহানবী (সা.) ইহুদির বাড়িতে দাওয়াতে গিয়েছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৪৪৯)। তাই স্বাভাবিক অবস্থায় দাওয়াত কবুল করবে- এটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হলো, দাওয়াতদাতার উপার্জন যদি বৈধ না হয়, তাহলে তার দাওয়াত কবুল করা যাবে কি?
এখানে প্রথম কথা হলো- দাওয়াতদাতার সম্পদ হালাল কি না, সেটা যদি জানা না যায় তাহলে এ ক্ষেত্রে তার বেশির ভাগ উপার্জন হালাল হলে বা হালাল হওয়ার প্রবল ধারণা হলে তার দাওয়াত ও হাদিয়া গ্রহণ করা জায়েজ আছে। আর যদি ওই ব্যক্তির উপার্জন হালাল না হয় (এটা যদি নিশ্চিতভাবে জানা যায়), তাহলে তার দাওয়াত গ্রহণ করা যাবে না। (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৪৬৭৫; শরহুস সিয়ারিল কাবির ১/৯৯)।
আর যদি লোকটির উপার্জন হালাল ও হারামের মধ্যে সংমিশ্রিত হয় এবং তার অর্থ এমনভাবে সংমিশ্রিত যে একটি অন্যটি থেকে পৃথক নয়, তাহলে বেশির ভাগ সম্পদের আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। হালাল উপার্জন বেশি হলে দাওয়াত গ্রহণ করবে আর হারাম সম্পদ বেশি হলে দাওয়াত গ্রহণ করবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তাঁর কাছে এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আমার একজন প্রতিবেশী আছে, যে সুদ খায় এবং সর্বদা আমাকে তার বাড়িতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত দেয়। আমি তার দাওয়াত কবুল করব কি?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘তোমার জন্য এটি বিনা কষ্টের অর্জন এবং এর গুনাহ তার ওপর বর্তাবে।’ (মুসান্নাফ আবদুর রাজ্জাক, হাদিস : ১৪৬৭৫; ইবনু রজব হাম্বলি, জামেউল উলুম ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা-২০১)।
আর যদি হারাম উপার্জনকারী হারাম উপার্জন দিয়ে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে না, বরং কারো থেকে হালাল টাকা ধার করে দাওয়াত খাওয়ায়, তাহলে তার দাওয়াত গ্রহণ করতে অসুবিধা নেই। একটি বিষয় এখানে লক্ষণীয় যে যার ইনকামে হারাম সম্পদের মিশ্রণ আছে বলে জানা যায়, তার দাওয়াত কবুল না করা তাকওয়া ও আল্লাহভীতির দাবি।
তবে হ্যাঁ, যদি এ ক্ষেত্রে দ্বিনি, পারিবারিক বা সামাজিক স্বার্থ থাকে, তাহলে সেখানে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে। সম্ভব হলে সেখানে গিয়ে কৌশলে তাকে সত্ভাবে উপার্জন করার উপদেশ দেবে। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা অবশ্যই সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করবে; নইলে শিগগির আল্লাহ তোমাদের ওপর গজব নাজিল করবেন। আর তখন তোমরা দোয়া করবে; কিন্তু তা কবুল করা হবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২১৬৯)।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ