তীব্র গরমে জনজীবন অস্থির হয়ে পড়েছে। অসহ্য দাবদাহে যাপিত জীবন দুর্বিষহ ঠেকছে। ঘরেবাইরে কোথাও স্বস্তি মিলছে না। বিশেষত শ্রমজীবী মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। এই ভয়াল প্রতিকূল সময়ে গরমের তীব্রতা থেকে বাঁচতে মানবজাতির মুক্তির একমাত্র ঠিকানা কালজয়ী জীবনাদর্শ ইসলামে রয়েছে স্নিগ্ধ সুরভিত চমৎকার নির্দেশনামালা। হৃদয় প্রশান্তিকর দ্যুতিময় সে নির্দেশনামালার খানিকটা ঝলক উপস্থাপনের প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
ইসতেগফার : যাপিত জীবনের ছত্রে ছত্রে ইসতেগফারের সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়ার বিকল্প নেই। সুখদুঃখ, হাসিকান্না, অনুকূল-প্রতিকূল- সর্বাবস্থায় ইসতেগফারের সুরভিত পাথেয়টি আঁকড়ে ধরে রাখা চাই। তীব্র গরমের এই অসহ্য দুর্বিষহ সময়ে অধিক পরিমাণে ইসতেগফার একটি কার্যকরী উপায়। তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে বাঁচতে ইসতেগফার একটি মোক্ষম হাতিয়ার। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে- ‘আমি তাদের বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। তোমাদের ধনসম্পদ সন্তানসন্ততিতে উন্নতি দান করবেন এবং তোমাদের জন্য দান করবেন উদ্যান এবং তোমাদের জন্য নদনদীর ব্যবস্থা করে দেবেন (সুরা নূহ : ১০-১২)।’
ইসতেগফার জীবনকে সহজ করে। সমস্যা-সংকট দূর করে যাপিত জীবনকে করে দেয় স্নিগ্ধ আলোকিত প্রশান্ত। ইবনু ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত : তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত ইসতিগফার পড়লে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না (সুনানে আবু দাউদ-১৫১৮)।’
দোয়া করা : তীব্র গরম থেকে বাঁচতে আল্লাহতায়ালার কাছে অধিক পরিমাণে দোয়া করার বিকল্প নেই। কারণ গরম ঠান্ডা আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহর ইচ্ছাতেই প্রকৃতিতে কখনো তীব্র দাবদাহ ছড়িয়ে পড়ে, আবার কখনো তীব্র ঠান্ডায় সবকিছু হিমশীতল হয়ে যায়। তাই গরম-ঠান্ডার স্রষ্টা আল্লাহর কাছেই বারবার ফিরে যাওয়া উচিত। আল্লাহর কাছেই আমাদের দুর্বলতা অসহায়ত্ব পেশ করা উচিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছেন।
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে কতিপয় লোক (বৃষ্টি না হওয়ায়) ক্রন্দনরত অবস্থায় এলে তিনি দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! আমাদের বিলম্বে নয় বরং তাড়াতাড়ি ক্ষতিমুক্ত-কল্যাণময়, তৃপ্তিদায়ক, সজীবতা দানকারী, মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষণ কর। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাদের ওপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে যায় (এবং বৃষ্টি হয়) (সুনানে আবু দাউদ-১১৬৯)।’
হাদিসে গরমকে আল্লাহর ক্রোধ বলা হয়েছে। আর আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন দানসদকা করতে বলেছেন, তেমনি দোয়াও শিখিয়ে গেছেন। দোয়াটি হলো, আল্লাহুম্মা আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি-মাতিকা ওয়া তাহাউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা। ‘হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি আপনার কাছে আপনার অনুগ্রহের অপসারণ, নিরাপত্তার প্রত্যাবর্তন, আকস্মিক পাকড়াও এবং যাবতীয় অসন্তোষ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি (মুসলিম ২৭৩৯, আবু দাউদ ১৫৪৫)।’
বৃক্ষরোপণ : গরমের প্রচণ্ডতা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পেতে চাইলে ফলপ্রসূ পদক্ষেপ হলো বৃক্ষরোপণ। পরিবেশ রক্ষাকারী গাছ কাটা হচ্ছে যত্রতত্র এবং এ কারণে পৃথিবীব্যাপী দেখা দিচ্ছে অসহ্য গরম। অথচ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের গাছ রোপণের প্রতি নির্দেশ ও উৎসাহ প্রদান করেছেন নানাভাবে। এ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশসহ অনেক নির্দেশ অমান্য করার অপরিহার্য পরিণতিতেই আমরা আজ নিপতিত। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃক্ষরোপণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি কিয়ামত এসে যায় এবং তখন তোমাদের কারও হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তবে কিয়ামত হওয়ার আগেই তার পক্ষে সম্ভব হলে যেন চারাটি রোপণ করে (আহমাদ হা/১২৯৩৩ ও ১৩০১২) (আদাবুল মুফরাদ,- ৪৮১)
লেখক : খতিব- আউচপাড়া জামে মসজিদ, টঙ্গী, গাজীপুর
বিডি প্রতিদিন/এমআই