ঢাকাই চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়ক খ্যাত শাকিব খানের প্রিয় একটি লালিত স্বপ্ন পূরণ হলো না। আর কখনো হওয়ারও সুযোগ নেই। কারণ কিংবদন্তি অভিনেতা ফারুক আর কখনো এই ধরাধামে ফিরবেন না। শাকিব স্বপ্নটা দেখেছিলেন তাঁর শ্রদ্ধার মানুষ অভিনেতা ফারুককেই ঘিরে। শীর্ষ নায়ক চেয়েছিলেন ফারুক অভিনীত ‘লাঠিয়াল’, ‘সাহেব’, ‘সীমার’, ‘নদের চাঁদ’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়ন মনি’সহ আরও বেশ কয়েকটি কালজয়ী ছবি নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে রিমেক এবং এসব ছবিতে তারা দুজন অভিনয় করতে। প্রথমেই তিনি এ দেশের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত শ্রেষ্ঠ ছবি ‘লাঠিয়াল’ রিমেক করতে চেয়েছিলেন। শাকিব সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এই ছবিতে আনোয়ার হোসেন অভিনীত কাদের লাঠিয়াল চরিত্রটি ফারুক এবং কাদেরের ছোট ভাই দুখু মিয়ার চরিত্র যেটিতে ফারুক অভিনয় করেছিলেন সেটি নিজে করতে। ২০২১ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকের কথা। ওই সময়ে অভিনেতা ফারুক মেডিকেল চেকআপের জন্য সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ছিলেন। ফারুক ভাই এবং শাকিব খান, দুজনের সঙ্গে আমার বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। শাকিব খান কোনো ছবির কাজ করতে গেলে প্রায়ই আমার সঙ্গে পরামর্শ করতেন। একুশ সালের মার্চের এক সন্ধ্যায় শাকিব আমাকে ফোন দিয়ে ফারুক ভাই অভিনীত ছবিগুলো রিমেক এবং তাতে ফারুক ভাইকে নিয়ে অভিনয়ের ইচ্ছার কথা জানালেন এবং আমাকে বললেন আমি যেন ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করি। আমি সঙ্গে সঙ্গে সিঙ্গাপুরে থাকা ফারুক ভাইকে ফোন দিলাম এবং শাকিবের স্বপ্নের কথা জানালাম। কথাটা শুনে এই গুণী অভিনেতা বেশ খুশি হয়ে উঠলেন এবং বললেন আমি রাজি, শাকিবকে বলেন এখনই আমার সঙ্গে কথা বলতে। শাকিব খানকে এ কথা জানাবার পরপরই তিনি ফোনে তাঁর সঙ্গে কথা বললেন এবং সিদ্ধান্ত হলো ফারুক ভাই দেশে ফিরে এলেই তিনি শাকিবকে নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত করবেন। শাকিব আমাকে বললেন, পর্দায় দেখা যাবে কাদের লাঠিয়ালরূপী ফারুক সাহেব চরের মধ্যে বুক টানটান করে অগ্নিশর্মা হয়ে লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, তার মুখোমুখি আমি। ভয়ংকরভাবে গল্পটি আধুনিক করে পর্দায় তুলে ধরব। এরপর ফারুক ভাইয়ের জন্য অপেক্ষার মাঝে শাকিব খান লাঠিয়াল ছবিটি নিয়ে মোটামুটি গবেষণা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু বিধাতার অমোঘ বিধান। ফারুক ভাই ধীরে ধীরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। আর বেঁচে দেশে ফিরতে পারলেন না। চিকিৎসকদের দীর্ঘ পরিশ্রম ব্যর্থ করে দিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ মে চিরতরে পৃথিবীর নীল দরিয়া পাড়ি দিয়ে অনন্তলোকের বাসিন্দা হলেন। অধরা রয়ে গেল ফারুক ভাইকে ঘিরে শাকিব খানের যত স্বপ্ন। আজও শাকিব বিষয়টি নিয়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত হন। আক্ষেপ করেন। যার কোনো সমাধান নেই। বাস্তবে কোনো দিন দেখা যাবে না ফারুক ভাই আর শাকিব খানের স্বপ্নের ‘লাঠিয়াল’।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট মুক্তি পেয়েছিল প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ও প্রযোজিত ‘লাঠিয়াল’ ছবিটি। ছবিটি প্রচণ্ড দর্শকপ্রিয়তার পাশাপাশি সেরা ছবিসহ ছয়টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নিয়েছিল। এগুলো হলো- সেরা ছবি- লাঠিয়াল, সেরা পরিচালক নারায়ণ ঘোষ মিতা, সেরা অভিনেতা আনোয়ার হোসেন, সেরা পার্শ্বঅভিনেতা ফারুক, সেরা পার্শ্বঅভিনেত্রী রোজী আফসারী এবং সেরা চিত্রসম্পাদক বশির হোসেন।