হজ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম। কোরআন ও হাদিস দ্বারা অকাট্যভাবে হজ প্রমাণিত। কেউ হজ ফরজ হওয়ার বিষয় অস্বীকার করলে তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। আর কেউ হজ ফরজ হওয়ার পর তা আদায় না করে মারা গেলে কবিরাহ গুনাহ হবে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের ভেতর যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই ঘরের হজ করা তার আবশ্য কর্তব্য। কেউ প্রত্যাখ্যান করলে সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
হজ আদায়ে অনীহা কেন
মানব প্রকৃতির দাবি হলো—মাতৃভূমি, পরিবার-পরিজন, বন্ধুবান্ধবের কাছে থাকা এবং সহায়-সম্পদ আগলে রাখা। এ জন্য হজ ফরজ হওয়ার পরও বহু মানুষ তা আদায় করতে অসলতা করে।
অনেকে ফরজ হজ আদায় না করেই মারা যায়। কিন্তু যারা আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য নিজের মাতৃভূমি, ঘর-বাড়ি, স্ত্রী-সন্তান ছেড়ে দূর আরবে হজ করতে যায় এবং এই বিধান পালনের অর্থ ব্যয় করে আল্লাহ তাদের বহুবিদ পুরস্কার দানের ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাঁকে নিজের অতিথি আখ্যা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর পথের সৈনিক, হজযাত্রী ও ওমরাহর যাত্রীরা আল্লাহর অতিথি। তাঁরা আল্লাহর কাছে দোয়া করলে তিনি তা কবুল করেন এবং কিছু চাইলে তা তাঁদের দান করেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৮৯৩)
ফরজ হজ আদায়ে অলসতা নয়
হজ ফরজ হওয়ার পর তা আদায়ে বিলম্ব করা অনুচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্রুততম সময়ে তা আদায়ে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা দ্রুততম সময়ে (ফরজ) হজ আদায় কোরো। কেননা তোমাদের কেউ জানে না ভবিষ্যতে সে কোন বিষয়ের (সমস্যা ও বিপদের) মুখোমুখি হবে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৮৬৯)
ফরজ আদায় না করার শাস্তি
হজ ফরজ হওয়ার পরও তা আদায় না করার ব্যাপারে মহানবী (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘কোনো ব্যক্তি আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার মতো সম্বল ও বাহনের অধিকারী হওয়ার পরও যদি হজ না করে তবে সে ইহুদি হয়ে মারা যাক বা খ্রিস্টান হয়ে মারা যাক তাতে (আল্লাহর) কোনো ভাবনা নেই। কেননা আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ তাআলার উদ্দেশে ওই ঘরের হজ করা তার অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৮১২)
উল্লিখিত হাদিসের ব্যাখ্যায় কোনো কোনো আলেম বলেন, শরয়ি অপারগতা ছাড়া কেউ হজ না করে মারা গেলে হজের সময় তার ঈমানহারা অবস্থায় মৃত্যুবরণের ভয় আছে। সম্ভবত এ কারণেই সুরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে হজ উপেক্ষাকারীর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ‘কাফারা’ (অস্বীকার বা কুফরি করা) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আয়াতে ‘আল্লাহ অমুখাপেক্ষী’ বাক্যে ইঙ্গিত মেলে সামর্থ্য ও সুযোগ থাকার পরও যে ফরজ হজ আদায় করল না তার ঈমানহীন মৃত্যুকে আল্লাহ ভ্রুক্ষেপ করেন না। (মাআরিফুল হাদিস : ৪/১৯৩)
সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-ও যারা হজ আদায়ে অসলতা করে তাদের প্রতি কঠোর মনোভাব পোষণ করতেন। ওমর (রা.) বলতেন, আমার ইচ্ছা করে, আমি বিভিন্ন শহরে একজন ব্যক্তিকে পাঠাব, সে দেখবে কোন সম্পদশালী ব্যক্তি হজ করেনি, সে তাদের ওপর জিজিয়া আরোপ করবে। কেননা তারা মুসলিম নয়, তারা মুসলিম নয়। (আস-সুন্নাতু লি-আবি বকর ইবনিল খাল্লাল : ৫/৪৪)
তাত্ত্বিক আলেমরা বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) হজ আদায় করার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে দ্বিন পরিপূর্ণ হওয়ার ঘোষণা আছে। বিদায় হজের সময় আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়, ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বিনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের জন্য পূর্ণ আমার অনুগ্রহ এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বিন (জীবনবিধান) মনোনীত করলাম।’ (সুরা মায়িদা, আয়াত : ৩)
এই ঘটনা ইঙ্গিত করে, হজ না করলে সামর্থ্যবান ব্যক্তির দ্বিনদারি পূর্ণতা পায় না।
হজ আনে প্রবৃদ্ধি
যারা অর্থ ব্যয়ের ভয়ে হজ আদায় করে না, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আশ্বাসের বাণী হলো, ‘তোমরা হজ ও ওমরাহ পরপর একত্রে আদায় কোরো। কেননা, এই হজ ও ওমরাহ দারিদ্র্য ও গুনাহ দূর করে দেয়, লোহা ও সোনা-রুপার ময়লা যেমনভাবে হাপরের আগুনে দূর হয়। একটি কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮১০)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন