জন্মগতভাবে নারীদের কিছু শারীরিক পার্থক্য আছে। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এর মানে এই নয়, তারা একেবারেই দুর্বল। জন্মসূত্রে প্রতিটি সন্তানই দুর্বল হয়ে থাকে।
পরে ইচ্ছাশক্তি, শিক্ষা, পরিশ্রম ও আত্মবিশ্বাসের মাধ্যমে সবাই সফল হয়। ইতিহাস সাক্ষী, পুরুষের পাশাপাশি অনেক বীরাঙ্গনা নারী পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন। তাই মুমিন নারীদের সুষম খাবার, ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে দুর্বলতা কাটানো উচিত। কেননা শক্তিশালী, কর্মঠ ও আত্মবিশ্বাসী নারী-পুরুষ আল্লাহর কাছে পছন্দনীয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘শক্তিশালী মুমিন দুর্বলের তুলনায় আল্লাহর কাছে উত্তম ও অধিক প্রিয়। প্রত্যেকের মধ্যেই কল্যাণ আছে, যাতে তোমার উপকার হবে তার প্রতি তুমি লালায়িত হয়ো এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কর এবং অক্ষম হয়ে থেকো না। যদি কোনো কিছু (বিপদ) তোমার ওপর আপতিত হয়, তবে এরূপ বলবে না যে যদি আমি এরূপ করতাম তবে এরূপ হতো।
বরং এই বলো, আল্লাহ যা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি যা চেয়েছেন তাই করেছেন। কেননা, তোমার যদি শব্দটি শয়তানের আমলের দুয়ার খুলে দেয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৩২)
আত্মরক্ষার কলাকৌশল
ইসলামে নারীদের আত্মরক্ষার বিষয়ে সরাসরি কোনো নির্দিষ্ট কৌশল বা মার্শাল আর্ট শেখার আদেশ দেওয়া না থাকলেও শরিয়তের বিভিন্ন নির্দেশনা, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনচরিত এবং সাহাবিদের ঘটনা থেকে বোঝা যায়—নারীদের আত্মরক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া বৈধ। যদি তা নিরাপদ পরিবেশে হয় এবং পুরুষদের থেকে আলাদা থাকে। আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে বর্তমান নারীরা তিরন্দাজি, কুংফু ও কারাতের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছিলেন। এটা একই সঙ্গে আত্মরক্ষার কৌশল এবং স্বামী=স্ত্রীর মধুর খুনসুটির বিষয়টি ফুটে ওঠে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি একসময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে সফরে ছিলেন। তিনি বলেন, তখন আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় তাঁর আগে বেড়ে গেলাম (অর্থাৎ জিতে গেলাম), তারপর যখন আমি মোটা স্থূলকায় হয়ে গেলাম, তখন পুনরায় তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হলাম। তখন তিনি আমার আগে বেড়ে (জিতে) গেলেন। তখন তিনি বলেন, এটা তোমার প্রথমবার জেতার বদলা। (আবু দাউদ, হাদিস : ২৫৭০ )
আত্মরক্ষার আধুনিক উপায়
আধুনিক যুগে আত্মরক্ষা শুধু বাহুবলের ওপর নয়, বরং বুদ্ধি, প্রযুক্তি ও প্রস্তুতির সমন্বয়ে গঠিত। একজন সচেতন নারী প্রযুক্তিসক্ষম, আত্মবিশ্বাসী এবং কৌশলী হলে নিজেকে অনেক বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারেন। আর এ জন্য স্মার্টফোনে নিরাপত্তা অ্যাপ, প্রিয়জনের কাছে লোকেশন শেয়ার, প্রশাসনিক হেল্পলাইন নম্বর সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। সন্দেহজনক ব্যক্তি বা স্থান এড়িয়ে চলা, প্রয়োজনে চিৎকার করা, হামলাকারীর আঘাত প্রতিরোধ করা শরিয়ত অনুমোদিত। নিজের জীবন ও পরিবার পরিজনের হেফাজতের দায়িত্বে নিহত হওয়া ব্যক্তি শহীদ হিসেবে গণ্য। এটি শহীদের মর্যাদার ব্যাপকতাকে প্রমাণ করে। সাঈদ ইবনে জায়েদ (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তার সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার দ্বিন রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার জান রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। যে ব্যক্তি তার স্বজন রক্ষার্থে নিহত হয় সে শহীদ। (তিরমিজি, হাদিস : ১৪২১)
বিডি প্রতিদিন/মুসা