বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবেকদর। মহান আল্লাহ এই রাতকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছেন। এই রাতের বিশেষ ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আমি একে নাজিল করেছি শবেকদরে। তুমি কি জানো কদরের রাত কী? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।’
(সুরা : কদর, আয়াত : ১-৩)
এই রাতে আল্লাহ তাঁর অফুরন্ত রহমত ও মাগফিরাতের দরজা খুলে দেন। এই রাতে যারা আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে, তাদের ক্ষমা করে দেন। আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-ও এই রাতের অনুসন্ধান করতেন। সাহাবায়ে কিরামও এই রাতের অনুসন্ধান করত গুরুত্ব সহকারে ইবাদত-বন্দেগি করতেন।
বর্তমান যুগেও আল্লাহর সৌভাগ্যবান বান্দারা এই রাতের অনুসন্ধানে রমজানের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করেন। অনেকে আবার ঘরেও এই রাতের অনুসন্ধানে নির্ঘুম আমলময় রাত কাটান। নিম্নে রাতের করণীয় কিছু আমল তুলে ধরা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত
রমজান মাস এবং এই বরকতময় রাতে মুসলমানদের জন্য সর্বোত্তম কাজ হলো কোরআন তিলাওয়াত, তা গভীর চিন্তা-ভাবনা ও অধ্যয়নের মাধ্যমে হোক কিংবা নিয়মিত পাঠের মাধ্যমে হোক। এটি নবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের একটি অন্যতম মাধ্যম।
কেননা জিবরাইল (আ.) প্রতিবছর রমজানে নবী (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত করতেন। নবী (সা.)-এর ইন্তেকালের বছর জিবরাইল (আ.) দুইবার কোরআন খতম করান।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) কল্যাণের কাজে ছিলেন সর্বাধিক দানশীল, বিশেষভাবে রমজান মাসে। (তাঁর দানশীলতার কোনো সীমা ছিল না) কেননা, রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক রাতে জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন এবং তিনি তাঁকে কোরআন তিলাওয়াত করে শোনাতেন। যখন জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি কল্যাণের জন্য প্রবহমান বায়ুর চেয়েও বেশি দানশীল হতেন।
(বুখারি, হাদিস : ৪৯৯৭)
ইমাম ইবনে আব্বাস (রা.)-এর বর্ণনায় পাওয়া যায় যে নবী (সা.) ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ দানশীল ব্যক্তি, আর রমজান মাসে তিনি আরো বেশি দানশীল হয়ে উঠতেন। এর কারণ ছিল জিবরাইল (আ.) প্রতি রাতে তাঁর সঙ্গে কোরআন পাঠ করতেন। এই শিক্ষার অনুসরণে পূর্ববর্তী মনীষীরা রমজান মাসে কোরআন পাঠ ও অধ্যয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) রমজানে ৬০ বার কোরআন খতম করতেন। আর ইমাম মালিক (রহ.) রমজান এলে তাঁর অন্যান্য বই বন্ধ করে দিতেন এবং সম্পূর্ণরূপে কোরআন পাঠে মনোনিবেশ করতেন।
তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজ
আল্লাহ তাআলা রাতে নামাজ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করেছেন এবং এটিকে মুমিনের সম্মানের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাতের নামাজ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মাধ্যম এবং এটি দুনিয়ার বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও পরকালের কল্যাণের পথ প্রশস্ত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের প্রত্যাশায় রমজান মাসে কিয়ামুল লাইল (রাতের নামাজ) আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’
(বুখারি, হাদিস : ৩৭)
জিকির ও দোয়া
রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি পায় এবং এই মাসে দোয়া কবুল হওয়ার বিশেষ সময় রয়েছে। তাই বেশি বেশি দোয়া করা উচিত, বিশেষ করে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভের জন্য।
আয়েশা (রা.) একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমি যদি শবেকদর পেয়ে যাই, তবে কোন দোয়া পড়ব?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পড়বে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’ (হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, আমাকে ক্ষমা করুন)।
(তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
এ ছাড়া অন্যান্য সময়ের মতো রমজানে যেকোনো জিকির করা যেতে পারে।
দান-সদকা
রমজানের যেকোনো দিন দান-সদকা করা ফজিলতপূর্ণ, তবে শেষ দশকের মধ্যে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। যে রাতের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, ‘লাইলাতুল কদর হলো হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’
(সুরা : কদর, আয়াত : ৩)
ইতিকাফ
রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ইন্তেকাল পর্যন্ত প্রতি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। এরপর তাঁর স্ত্রীরাও এ আমল অনুসরণ করতেন।’
(বুখারি, হাদিস : ২০২৬)
এক কথায় এই রাতের মূল আমল হলো—নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, দোয়া, তওবা ও ইস্তিগফার এবং দান-সদকা। আল্লাহ এই রাতের বরকত আমাদের নসিব করুন। আমিন!
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন