রাশিয়া গতকাল সকালে কিয়েভের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে। রাশিয়ার ওই হামলায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ৩৫ জন। এএফপির সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, রাশিয়া ইউক্রেনের অবকাঠামোর ওপর আক্রমণ জোরদার করছে এবং এর ফলে শহরের কেন্দ্রস্থলে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটেছে। কিয়েভের মেয়র এ হামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে দেশটিতে অবস্থিত আজারবাইজানের দূতাবাস ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। আজারবাইজানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত মিখাইল ইয়েভদোকিমভকে তলব করে এ প্রতিবাদ জানায়। ২০২২ সালে ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণ শুরু করার পর রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশেষ করে ইউক্রেনীয় জ্বালানি অবকাঠামোর ও রেলব্যবস্থার পাশাপাশি আবাসিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করেও হামলা চালিয়ে আসছে। কিয়েভ আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান মাইকোলা কালাশনিক বলেছেন, গতকাল রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো এটিকে ‘রাশিয়ার ব্যাপক হামলা’ বলে অভিহিত করে বলেছেন, বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। ক্লিটসকো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টেলিগ্রামে লিখেছেন, রাশিয়ার হামলায় কমপক্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে একজন গর্ভবতী নারী ও একজন পুরুষের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর। তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার হামলার ফলে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহও ব্যাহত হতে পারে। শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টাইমুর তাকাচেঙ্কো সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ইউক্রেনের আবাসিক ভবনগুলোকে লক্ষ্য করে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। তিনি আরও বলেন, কিয়েভজুড়ে প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত উঁচু ভবন রয়েছে। ক্লিটসকো বলেন, কিয়েভের ১০টি অঞ্চলের মধ্যে আটটিতে আগুন ধরে যাওয়া এবং বিভিন্ন ভবনের ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, সবই জরুরি চিকিৎসক দলকে মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দ্রুত উত্তেজনা বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র একদিকে রাশিয়ার তেল কোম্পানি রসনেফট ও লুকঅয়েলের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ক্রেমলিন তাদের নতুন পারমাণবিক শক্তিচালিত বুরেভেস্টনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং পোসাইডন আন্ডারওয়াটার ড্রোন পরীক্ষা করেছে। উভয় দেশই বলেছে তারা পারমাণবিক পরীক্ষা পুনরায় শুরু করতে পারে। উভয় দেশ যে কেবল হুমকি দিচ্ছে এমন না, বরং স্থলভাগেও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। বছরের শুরুতে সম্পর্ক উন্নতির সম্ভাবনা থাকলেও এখন পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পাল্টে গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছিলেন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ ও ‘ভøাদিমিরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে। কিন্তু যুদ্ধ এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া শান্তি প্রস্তাবের বদলে হুমকি দেওয়া চালিয়ে যাচ্ছে। পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত কূটনীতিতে ট্রাম্পের বাজি এখনো কেন কাজ করেনি? ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের শুরুর দিকে কিছুটা অগ্রগতির আংশিক ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল। -রয়টার্স
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার আক্রমণের পর প্রথমবার ওয়াশিংটন ও মস্কো সরাসরি আলোচনা করে। দুই প্রেসিডেন্ট নিয়মিত ফোনে কথা বলেন এবং গত আগস্টে আলাস্কায় বৈঠক করেন। এ মুহূর্তে উভয় পক্ষের একমাত্র সাফল্য হলো যে সংলাপ অন্তত চলছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের ইউরোপ ও রাশিয়াবিষয়ক সাবেক সিনিয়র ডিরেক্টর অ্যান্ড্রু পিক বলছেন, ‘আমরা অন্তত শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা বলছি- এটাই বড় অগ্রগতি। অবস্থান তুলে ধরা, মতবিনিময় করা, এটাই কূটনীতির ভিত্তি।’ ট্রাম্প ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপরই বেশি ভরসা করেছেন। তিনি তার পুরনো নিউইয়র্ক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়িক ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্টিভ উইটকফকে বিশেষ দূত হিসেবে পুতিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য বেশ কয়েকবার পাঠিয়েছেন। প্রতিটি সফরের পর দুই পক্ষই জানায় তারা সমঝোতার কাছাকাছি চলে এসেছেন। কিন্তু পররাষ্ট্র নিয়ে যারা কাজ করেন সেসব মহলে উইটকফের কূটনৈতিক অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেহ আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউরোপের দুই কূটনীতিক বিবিসিকে জানান, উইটকফ প্রায়ই পুতিন ছাড় দেবেন এমন ভুল ধারণা ধরে নিয়ে মস্কো যেতেন কিন্তু পরে হোয়াইট হাউস দেখত বাস্তবতা তার উল্টো। ও এএফপি