ইরানের রাজধানী তেহরানে গতকাল জুমার নামাজের পর ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ইরানের ক্ষমতাসীন সরকার ও নেতাদের সমর্থনে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়। গতকাল ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের হুমকির বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন। ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে বলা হয়-‘গতকাল ছিল ইরানি জাতির ঐক্য ও প্রতিরোধের দিন।’ প্রচারিত ভিডিওতে বিক্ষোভকারীদের হাতে ১৩ জুন ইসরায়েলের হামলায় নিহত বিভিন্ন কমান্ডারের ছবি দেখা যায়। এ সময় বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকে ইরান, ফিলিস্তিন ও হিজবুল্লাহর পতাকাও উড়াচ্ছিলেন। একজন বিক্ষোভকারীর হাতে থাকা ব্যানারে লেখা রয়েছে-‘আমি আমার নেতার জন্য জীবন উৎসর্গ করব।’ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এই ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, রাজধানী তেহরান ছাড়াও দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর তাবরিজ এবং দক্ষিণের শিরাজেও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় ইরানের পাঁচটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসাধীন বহু রোগীর সেবা ব্যাহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির জরুরি সেবা বিভাগের প্রধান। গতকাল ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
অন্যদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন হাসপাতালের রোগীরা। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পিরহোসেইন কোলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বিস্ফোরণের ধোঁয়ায় রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দিয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এসব হামলার প্রভাব ও প্রমাণ রেডক্রসসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে পাঠানো হবে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার আকাশযুদ্ধ দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় কর্মকর্তারা ইরানকে আলোচনার টেবিলে ফেরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এ যুদ্ধে জড়াবে কি না-সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে। গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করে, দাবি করে তারা ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা থেকে বিরত রাখতে চায়। পাল্টা জবাবে ইরানও ইসরায়েলে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। ইরান দাবি করেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি কেবল শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত। ইরানের মানবাধিকার সংস্থা হারানা জানায়, ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক নাগরিক। অন্যদিকে ইরানের পাল্টা হামলায় অন্তত দুই ডজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে তেল আবিব। তবে কোনো পক্ষের দেওয়া এই তথ্য স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। ইসরায়েল বলছে, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ও ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করছে। তবে পশ্চিমা ও আঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েলের লক্ষ্য খামেনির শাসনব্যবস্থার পতন ঘটানো। বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা কি ইরানের শাসনব্যবস্থার পতন চাই? এটা হামলার একটি সম্ভাব্য ফল হতে পারে, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ইরানিদের। তারা চাইলে স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করতে পারে।’ -বিবিসি ও প্রেস টিভি