ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ থেকে যুক্তরাষ্ট্র মুনাফা নেওয়ার জন্য নতুন করে প্রস্তাব দিয়েছিল। সেই প্রস্তাব ফাঁস হয়ে গেছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কার্যালয় থেকে। আর এই ফাঁসের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলেনস্কি। সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই তদন্তে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিষেবা নিয়োজিত থাকবে এবং প্রয়োজনে লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা তথা পলিগ্রাফ পরীক্ষাও ব্যবহার করা হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই তদন্ত এমন এক সময়ে শুরু হলো, যখন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও জ্বালানিসম্পদ নিয়ে প্রস্তাবিত একটি চুক্তিপত্রের শর্তাবলি নিয়ে কিয়েভ ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ দাবির ব্যাপকতা দেখে তারা হতবাক। ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের কিছু অংশকে রাজনৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছেন তাঁরা। এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে চুক্তি থেকে ‘বেরিয়ে আসার চেষ্টা’ করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, জেলেনস্কি যদি শিগগিরই এই চুক্তিতে স্বাক্ষর না করেন, তবে তাঁকে ‘বড় সমস্যার’ সম্মুখীন হতে হবে। ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের মধ্যে ইতোমধ্যে লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিতে বা কতজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, তা জানাতে অস্বীকার করেছেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। দেশটির নিরাপত্তা পরিষেবা এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ইউক্রেনের নিরাপত্তা রক্ষায় আইনের মধ্যে থেকে কাজ করে এবং তাদের কার্যকলাপের কিছু বিবরণ গোপন রাখে।
পলিগ্রাফ পরীক্ষা বিতর্কিত এবং এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন আছে। তবে ইউক্রেনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রায়শই ফৌজদারি তদন্ত এবং সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে ইচ্ছুক বিদেশিদের স্ক্রিনিংসহ বিভিন্ন উদ্দেশে এটি ব্যবহার করে থাকে।
গত ২৬ মার্চ বিরোধীদলীয় সংসদ সদস্য ইয়ারো¯ভা ঝেলেজনিয়াক খসড়া চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পর এই তদন্ত শুরু হয়। তিনি দাবি করেন, চুক্তির একটি কপি হাতে পেয়েছেন। এর পরদিন ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-ও আলাদাভাবে সেই নথি পেয়ে এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করে। গত ২৮ মার্চ এক ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস-কে বলেন, মার্কিন নথি ফাঁসের ঘটনাটি তাঁর কাছে ‘অদ্ভুত’ লেগেছে। তিনি বলেন, ‘আমি ভাবছি কে এই তথ্য সরবরাহ করছে।’
ইউক্রেনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, এটি তাদের দেশের সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করতে পারে, ভবিষ্যতের রাজস্ব বিদেশে পাঠাতে পারে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার বিষয়টিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। গত সপ্তাহে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘আমরা এমন কোনো ব্যবস্থা মেনে নিতে পারি না, যা আমাদের ইইউর পথে বাধা সৃষ্টি করে।’