যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সৌদি আরবে তিন দিন ধরে শান্তি আলোচনার পর কৃষ্ণসাগরে দুই দেশের নৌযানে হামলা বন্ধে রাজি হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। সোমবার থেকে চলা আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় এ বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছায় মস্কো ও কিয়েভ। ওয়াশিংটন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এ চুক্তির ফলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ ফের চালু হবে এবং সব পক্ষ ‘স্থিতিশীল ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’ প্রতিষ্ঠায় কাজ চালিয়ে যাবে। এ ছাড়াও একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোয় হামলা না চালানোর বিষয়েও একমত হয়েছে দুই দেশ।
তবে রাশিয়া বলেছে, তাদের খাদ্য ও সার ব্যবসার ওপর থেকে বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরেই নৌ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা রিয়াদে মস্কো ও কিয়েভের আলোচকদের সঙ্গে পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন, যার লক্ষ্য ছিল দুই পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করা। তবে রুশ ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল সরাসরি কোনো বৈঠক করেনি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কৃষ্ণসাগরে হামলা বন্ধের এ চুক্তিকে সঠিক একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ভলোদিমির জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘এরপর আর কেউ ইউক্রেনের বিরুদ্ধে স্থায়ী শান্তি আলোচনার পথে বাধা বলে অভিযোগ করতে পারবে না।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এটা যদি রাশিয়া লঙ্ঘন করে, তাহলে আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সরাসরি প্রশ্ন করব। তারা লঙ্ঘন করলে আমরা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা চাইব, অস্ত্র চাইব।’ তবে ওয়াশিংটনের ঘোষণা দেওয়ার পরপরই ক্রেমলিন জানিয়েছে, রাশিয়ার ব্যাংক, উৎপাদক এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য ও সার বাণিজ্যে জড়িত রপ্তানিকারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত কৃষ্ণসাগরের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। রাশিয়ার দাবি, ব্যাংকগুলোর মধ্যে সুইফট পেমেন্ট সিস্টেমের সঙ্গে ফের সংযুক্ত করা, খাদ্য বাণিজ্যে যুক্ত রুশ পতাকাবাহী জাহাজগুলোর পরিষেবা নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং খাদ্য উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রীর সরবরাহে আরোপিত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা। তবে হোয়াইট হাউস যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে বিষয়টি স্পষ্ট নয় যে, এ চুক্তি কবে ও কখন থেকে কার্যকর হবে। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সম্পর্কে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন সব কিছুই বিবেচনা করছি। আমরা এ বিষয়ে পর্যালোচনা করছি।’ যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া আলোচনার বিষয়ে ওয়াশিংটনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র কৃষি ও সার রপ্তানির জন্য বিশ্ববাজারে রাশিয়ার প্রবেশাধিকার পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে। কিয়েভে বক্তব্য দেওয়ার সময় জেলেনস্কি এটিকে ‘অবস্থানগত দুর্বলতা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।-বিবিসি
তিনি বলেন, যদি মস্কো তার প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে তাহলে ইউক্রেন রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অতিরিক্ত সামরিক সহায়তাও চাইবে। পরে ইউক্রেনের জনগণের উদ্দেশে রাতে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি ক্রেমলিনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে বলেন, কৃষ্ণসাগরের যুদ্ধবিরতি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তের ওপর নির্ভরশীল নয়। আর কৃষ্ণসাগর নিয়ে সমঝোতার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেছেন, ‘কৃষ্ণসাগরের পূর্বাংশের বাইরে দিয়ে রুশ সামরিক নৌযানের যেকোনো ধরনের চলাচলকে সমঝোতার লঙ্ঘন হিসেবে ধরে নেবে কিয়েভ। একই সঙ্গে একে হুমকি বলে মনে করা হবে। তখন ইউক্রেনের নিজেদের রক্ষা করার পুরোপুরি অধিকার সৃষ্টি হবে।’