সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অফিস-আদালত, কাজকর্ম ছেড়ে রাস্তায় নেমেছেন দাবি আদায়ে। বিক্ষোভ, মানববন্ধন, অনশন, অবস্থান, কলমবিরতিসহ নানান কর্মসূচিতে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি। পরিস্থিতি সামলাতে সিরিজ বৈঠক করেও সুরাহা করতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। বন্ধের উপক্রম হয়েছে ব্যবসাবাণিজ্য। শিল্পকারখানায় চলছে অস্থিরতা, অরাজকতা। লোকসানের ভার টানতে টানতে মাথায় হাত শিল্পোদ্যোক্তাদের। এভাবে চলতে থাকলে দেশের অর্থনীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কেউ জানে না। রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ব্যাংক খাতে রয়েছে আস্থাহীনতা। ডিপোজিটরদের মধ্যে টাকা ফেরত না পাওয়ার আতঙ্ক তো রয়েছেই। এখনো অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা মতো টাকা দিতে পারছে না।
বিশ্বব্যাংক ঢাকার সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। তার চেয়েও বড় অনিশ্চয়তা ব্যবসা-বিনিয়োগ নিয়ে। ভঙ্গুর অবস্থা থেকে দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে। এরই মধ্যে এত দাবিদাওয়া আর আন্দোলন, মিছিল মিটিং বিনিয়োগকারীদের মাঝে আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হঠাৎ করেই মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। ন্যায্য-অন্যায্য দাবি আদায়ে রাজপথ, অফিস-আদালতে অহেতুক প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করছে। তুচ্ছ ঘটনায় ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ঘটছে প্রাণহানি। এসবের প্রতিবাদে হচ্ছে মিছিল-সমাবেশ, অবরোধ। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও চলছে অচলাবস্থা। যার সামগ্রিক প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। এর চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির গতি মন্থর করে দিচ্ছে। শহরজুড়ে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়ছে নগরবাসী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রাফিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর দেশের ব্যবসাবাণিজ্য বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্যেই শুরু হয়েছে আন্দোলন, মিছিল মিটিং। যা সামগ্রিক ব্যবসাবাণিজ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। এর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে বলে তিনি মনে করেন।
৫ আগস্টের পর থেকে শেয়ারবাজারের সূচক অব্যাহতভাবে কমে তা তলানিতে ঠেকেছে। প্রতিবাদে কাফনের কাপড় পরে মিছিল ও প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক মাসে বাজার মূলধন থেকে লাখ কোটি টাকারও বেশি উধাও হয়ে গেছে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। সচিবালয়, প্রেস ক্লাব, ব্যাংক পাড়া, শেয়াবাজার এলাকা, রাজপথ সবখানেই আন্দোলন। কয়েক দিন ধরে যুক্ত হয়েছে এনবিআর বিলুপ্ত করার প্রতিবাদে কর্মসূচি। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলমবিরতি পালন করছেন। গতকাল থেকে সচিবালয়ে ভাতা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালুর দাবিতে অর্থ উপদেষ্টার দপ্তরে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদ। পরিস্থিতি সামলাতে দ্রুত তাদের কথা শুনতে আসেন অর্থ উপদেষ্টা। বিকালে দাবি পূরণের আশ্বাসে স্থান ত্যাগ করে পরিষদ।
ইশরাক হোসেনকে উত্তর সিটির মেয়রের দায়িত্ব বুঝে দেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকরা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে গতকাল বকেয়া বেতনের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, যে কোনো ভায়োলেন্স অর্থনীতি ও ব্যবসাবাণিজ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এখন যে ধরনের আন্দোলন হচ্ছে, এগুলো খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এমনিতেই ব্যবসাবাণিজ্যের অবস্থা ভালো নেই। তার ওপর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। ফলে অর্থনীতি, ব্যবসা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান- সবই এখন অনিশ্চিত।