নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণের জন্য আগামী জুন-জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করবে বিএনপি। এর মধ্যে যদি অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেয় তাহলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। গত সোমবার রাতে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা, মেয়র হিসেবে ইশরাককে দায়িত্ব না দেওয়া, চট্টগ্রাম বন্দর ও সামরিক করিডর নিয়ে আলোচনা হয়। বিস্তারিত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, নির্বাচনের রোডম্যাপের জন্য সরকারকে জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। এরপর রাজপথ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপি দুই কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে রয়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল- এ তিন সংগঠনের সারা দেশে তারুণ্য সমাবেশ ও বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ চলবে। এ ছাড়া আগামী ২৫ মে থেকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নতুন কর্মসূচি শুরু হবে। এসব কর্মসূচি নিয়ে চলবে। এরপর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে কোরবানির ঈদ রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরশনে ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশ করলেও তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে অন্তর্বর্তী সরকার গড়িমসি করছে। বিশেষ করে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীবের ভূমিকা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। সূত্র আরও জানায়, যুগপৎ আন্দোলনের ঐক্য আরও সূদৃঢ় করতে পদক্ষেপ নেবে স্থায়ী কমিটি। কারণ ইতোমধ্যে দু-তিনটি বিষয়ে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে। এটা আর সামনের দিকে এগোতে দিতে চায় না বিএনপির হাইকমান্ড।
চট্টগ্রাম বন্দর সরকার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার নিয়ে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে- এ বিষয়টি বৈঠকে তোলেন একজন সদস্য। তখন আলোচনায় অংশ নিয়ে আরেকজন সদস্য বলেন, এটা একটা অন্তর্বর্তী সরকার। তারা একদিকে মানবিক করিডর দিচ্ছে, অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার স্বপ্ন দেখছে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের হাতে দিলে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে রাত সাড়ে ৮টায় এ বৈঠক শুরু হয়ে শেষ হয় ১১টার দিকে। এতে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস (ভার্চুয়ালি), গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ভার্চুয়ালি), আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান (ভার্চুয়ালি) ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (ভার্চুয়ালি), মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভার্চুয়ালি) ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।