কোরবানি ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। কোরবানি সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান না থাকায় বিভিন্ন সময় এর সঙ্গে অনেক ভুল ধারণাকেও গুলিয়ে ফেলি।
তার মধ্যে একটি হলো পরিবারে যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, তাদের পক্ষ থেকে না দিয়ে গৃহকর্তার পক্ষ থেকে কিংবা পরিবারের অন্য পুরুষ সদস্যদের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া। অথচ অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারে দেখা যায়, নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকার কারণে পরিবারের নারী ও কন্যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে।
আবার অনেক পরিবারে মা-বাবার পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হলেও তাঁদের অবিবাহিত ছেলে-মেয়ের (যাদের শিক্ষা বা বিয়ের জন্য রাখা টাকা বা সোনা দিয়ে সাহেবে নিসাব হয়ে গেছে) পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। অথচ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ায় তাদের ওপরও কোরবানি ওয়াজিব।
আবার অনেক পরিবারে দেখা যায়, বড় পশুতে কোরবানি দেওয়ার আশায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে এক ভাগে কোরবানি দিচ্ছে, অথচ তার পরিবারে একাধিক লোকের ওপর কোরবানি ওয়াজিব ছিল, তারা চাইলে এই টাকায় ছোট পশু কিনে একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় করতে পারত।
তাই কোরবানির বাজেট ঠিক করার সময় এখন থেকে আমাদের জানতে হবে, আমাদের পরিবারে কার কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব! তাদের সবার পক্ষ থেকে কোরবানি করতে গেলে কিভাবে সামর্থ্যের মধ্যে সবার নামে কোরবানি করা যায়।
নিম্নে বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো—
কার ওপর কোরবানি ওয়াজিব : এক বাক্যে বলতে গেলে, যার ওপর জাকাত ওয়াজিব, তার ওপর কোরবানিও ওয়াজিব। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন ওই মুসলিম নর-নারীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব, যে ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে। জাকাত আর কোরবানির মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাতে সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হতে হয়, আর কোরবানিতে কোরবানির দিনগুলোতে এই পরিমাণ সম্পদ কারো কাছে থাকলেই তাকে কোরবানি করতে হয়।
নিসাব কী : সোনার ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি সোনার মালিক হলেই তাকে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক বলে গণ্য করা হবে।
আর রুপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দামের সমপরিমাণ অর্থ বা এমন প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিস, যার দাম সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দামের সমপরিমাণ বা বেশি হয়।
কারো কাছে যদি সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা, এগুলোর কোনো একটি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না-ও থাকে, কিন্তু প্রয়োজনাতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দামের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব। (আল-মুহীতুল বুরহানী : ৮/৪৫৫)
যেমন—কারো কাছে দুই ভরি সোনা ও ৫০০ টাকা আছে, যার কোনো একটিও পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ নয়। কিন্তু দুই ভরি সোনার দাম ও ৫০০ টাকা একত্র করলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার দামের বেশি হয়ে যায়।
তাই তিনি নিসাবের মালিক বলে গণ্য হবেন এবং তাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হবে।
উল্লিখিত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, আমাদের দেশে এমন অনেক নারী রয়েছেন, যাঁর ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে আছে, কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া হয় না। আবার এমন অনেক পুরুষ আছেন, যাঁর ওপর মূলত কোরবানি ওয়াজিব নয় (ওয়াজিব তাঁর স্ত্রী বা কন্যার ওপর); কিন্তু তাঁর পক্ষ থেকেই কোরবানি দেওয়া হচ্ছে। আছে এমন যুবক-যুবতিও, যার কাছে কোনো না কোনোভাবে নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে, কিন্তু সে জানেই না যে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব। যেহেতু কোরবানি একটি ইবাদত, তাই ওই কোরবানি ওয়াজিব না হওয়া ব্যক্তি কোরবানি করার সওয়াব পেয়ে গেলেও মূলত যার ওপর ওয়াজিব ছিল, তাকে অবশ্যই কোরবানি করতে হবে।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে কোরবানি করার তাওফিক দান করুন।
বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ