নিউজিল্যান্ডে ২০ লাখ নিউজিল্যান্ড ডলারেরও বেশি (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা) প্রতারণার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এক ভারতীয় বংশোদ্ভূত দম্পতি। দেশটির শিশু কল্যাণ সংস্থা ‘ওরাঙ্গা তামারিকি’র কাছ থেকে এই অর্থ আত্মসাৎ করেন তারা।
অভিযুক্ত ওই দম্পতির নাম নেহা শর্মা ও আমানদীপ শর্মা। তাদের মধ্যে অর্থ পাচার এবং জাল নথি ব্যবহারসহ একাধিক জালিয়াতির অভিযোগে নেহা শর্মাকে দোষী সাব্যস্ত করে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
আর তার স্বামী আমানদীপ শর্মাও প্রতারণা ও পাচারের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
গ্রেফতার এড়াতে ওই দম্পতি ভারতের চেন্নাইয়ে যেতে একটি বিজনেস ক্লাস ফ্লাইটে বুকিং দেন। তবে উড়াল দেওয়ার আগেই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ওই দম্পতির তিনটি সম্পত্তি, তিনটি গাড়ি ছিল এবং তাদের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় আট লাখ ডলারের বেশি নগদ জমা ছিল।
নেহা শর্মা ওরাঙ্গা তামারিকিতে সম্পত্তি এবং সুবিধা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। অন্যদিকে তার স্বামী আমানদীপ শর্মা ডিভাইন কানেকশন নামে একটি নির্মাণ সংস্থা পরিচালনা করতেন। ডিভাইন কানেকশনকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের প্রায় আট মাস পর তাদের জালিয়াতিমূলক পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসে।
এজেন্সির কেউই জানত না যে তারা দু’জন বিবাহিত। এর ফলে নেহা শর্মা জুলাই ২০২১ থেকে অক্টোবর ২০২২ এর মধ্যে ২০০টিরও বেশি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ এবং ৩২৬টি বর্ধিত বিলসহ চালান ডিভাইন কানেকশনে স্থানান্তর করতে তার অভ্যন্তরীণ অ্যাক্সেস ব্যবহার করেন, যা সরাসরি তার স্বামীর কোম্পানিকে লাভবান করে। এমনকি কিছু অর্থ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্যও দেওয়া হয়েছিল, যেমন- তাদের বাড়ির জন্য একটি নতুন টেলিভিশন।
নেহা শর্মা ২০২১ সালে জাল চাকরির রেফারেন্স জমা দিয়ে এজেন্সিতে যোগদান করেন। স্বার্থের সংঘাত সম্পর্কে এজেন্সির কঠোর নিয়ম থাকা সত্ত্বেও তিনি ডিভাইন কানেকশন বা সংস্থাটির পরিচালক তার স্বামীর সাথে তার সম্পর্ক কখনও প্রকাশ করেননি।
দু’জনের মধ্যে একটি টেক্সট বার্তায়, নেহা শর্মা আমানদীপ শর্মাকে বলেছিলেন, “তুমি শুধু বলো তুমি আমার জন্য কাজ করছো। তাকে বলা উচিত হবে না যে, তুমি আমার স্বামী... এটা আমার জন্য একটি বিশাল সমস্যা হবে।”
এমনকি তিনি এজেন্সির মাধ্যমে ডিভাইন কানেকশনে আরও কাজ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য একজন বন্ধুকেও নিয়ে এসেছিল। অফিস চলাকালে তিনি শুধু অর্থপ্রদান অনুমোদনই করেননি, তিনি ওই কোম্পানি পরিচালনায়ও সহায়তা করতেন।
২০২২ সালের অক্টোবরে এক সহকর্মী একই ঠিকাদারের কাছে বারবার কাজের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর এই জালিয়াতি প্রকাশ্যে আসে। ওই বছরের ২ নভেম্বর যেদিন নেহা শর্মা এই অনিয়মের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, সেদিন তিনি হঠাৎ ইমেলের মাধ্যমে পদত্যাগ করেন। তিনি দাবি করেন যে, তাকে অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং সভায় যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পদত্যাগের ২০ মিনিটের মধ্যেই, আমানদীপ শর্মাকে ডিভাইন কানেকশনের পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং কোম্পানির ঠিকানা পরিবর্তন করা হয়, যা তাদের দোষ ঢাকতে একটি স্পষ্ট প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হয়।
নিউজিল্যান্ডের সিরিয়াস ফ্রড অফিস ২০২৩ সালের ৩০ মার্ ডিভাইন কানেকশনে সম্পত্তিতে অভিযান চালায়। অভিযানের সময় নেহা শর্মা দাবি করেন যে, ওরাঙ্গা তামারিকিতে যোগদানের আগেই ডিভাইন কানেকশনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি সাংঘর্ষিক বিষয়টি প্রকাশ এনেছিলেন। পরে তদন্তের মাধ্যমে তার এই দাবিগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি
বিডি প্রতিদিন/একেএ