হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে তীব্র বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। যদিও কিছুদিন আগে থেকেই দুই নেতার সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছিল।
কেননা, ট্রাম্প জেলেনস্কিকে একজন স্বৈরশাসক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, একটা মিথ্যার ওপর রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে ইউক্রেন। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে সম্পর্কে ফাটল সৃষ্টি হয়। বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন জোট এখন টুকরা হয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্পর্কের প্রকাশ্য ভাঙন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সমস্যা বাধার ইঙ্গিতও বটে। ইউক্রেন ছাড়াও ইউরোপীয় দেশগুলোর নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি নিয়েও এখন আরও অনেক সংশয় ও প্রশ্ন দেখা দেবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্ন, তা হলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি তাঁর একসময়ের পূর্বসূরি হ্যারি ট্রুম্যানের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন? ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান ঘোষণা দেন, ন্যাটোর কোনো দেশের ওপর হামলা যুক্তরাষ্ট্র নিজের ওপর হামলা বলেই মনে করবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দৃশ্যত ট্রাম্পের যে তীব্র আগ্রহ, তার ভিত্তিতেই এসব উদ্বেগ জন্ম নিচ্ছে। ট্রাম্প ইউক্রেনের ওপর ভীষণ চাপ তৈরি করেছেন। আর রাশিয়ার জন্য দিচ্ছেন বড় ধরনের ছাড়ের প্রস্তাব, যা ইউক্রেনবাসীকেই দিতে হবে। ট্রাম্প ও জেলেনস্কির বাগ্বিতন্ডায় ইউক্রেনের নিরাপত্তার বিষয়টি নগণ্য হয়ে উঠছে। সেই সঙ্গে ইউরোপীয়রাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে হয়ে পড়ছেন উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনের ছাড় দেওয়ার ট্রাম্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন জেলেনস্কি। এটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খেপিয়ে তুলেছে। ট্রাম্পের খেপে যাওয়ার পেছনে জেলেনস্কির খনিজ চুক্তিতে সই প্রত্যাখ্যান করাই শুধু কাজ করেনি। ইউক্রেনের বাসিন্দারা বিশ্বাস করে, তারা এমন এক যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জাতি হিসেবে বাঁচামরার প্রশ্ন। এ ছাড়া পুতিনকে যদি দমিয়ে রাখা না যায়, তবে সুযোগ পেলেই তিনি যুদ্ধাবসানের যে কোনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করবেন, এটিও বিশ্বাস তাদের। এমন বিশ্বাস থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বারবারই চাইছেন জেলেনস্কি। শুক্রবার ওভাল অফিসের বৈঠকটি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের হস্তক্ষেপের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এখন যে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে, তা হলো একজন পর্যবেক্ষকের ভাষায়- প্রকাশ্য এ ঝগড়া ছিল একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ছিনতাই। -বিবিসি ও এএফপি