প্রায় এক সপ্তাহ ধরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে চলা সংঘর্ষ-উত্তেজনার মধ্যে দুই দেশ ইতোমধ্যে যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে। মালয়েশিয়ায় এক জরুরি বৈঠকে উভয় পক্ষ ‘তাৎক্ষণিক ও শর্তহীন’ যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় সোমবার মধ্যরাত থেকে। তবে পরদিনই থাইল্যান্ড অভিযোগ করে, কম্বোডিয়ার সেনারা একাধিক এলাকায় হামলা চালিয়েছে। যদিও কম্বোডিয়া তা অস্বীকার করে।
এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। প্রায় ৩ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক চাপ বড় ভূমিকা রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, যদি সংঘর্ষ না থামে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করা হতে পারে।
আগামী শুক্রবার থেকে উভয় দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ শতাংশ হারে শুল্ক (tariff) বসানোর কথা রয়েছে। ফলে উভয় দেশই চাপের মুখে পড়ে যুদ্ধবিরতিতে যেতে বাধ্য হয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তবে সীমান্তে এখনো থেমে থেমে ছোটখাটো গোলাগুলির খবর মিলছে। থাই সেনাবাহিনীর দাবি, মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার সকাল পর্যন্ত গুলি বিনিময় হয়েছে, তবে ভারী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, সীমান্তের পাহাড়ি এলাকা ‘ফু মাখুয়া’তে থাই সেনারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন এবং সেনা চলাচল সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামীকাল যৌথ সীমান্ত কমিটির বৈঠকে আরও স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে আলোচনা হবে।
কম্বোডিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জানান, যুদ্ধবিরতির সময় যে কিছু ‘ঘটনা’ ঘটেছে, তা নিয়ে তিনি থাই মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তবে কম্বোডিয়ার সেনারা যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনেছে বলে তিনি জানান।
সীমান্ত এলাকায় কিছুটা স্বস্তির দেখা মিললেও অনেক শরণার্থী এখনো নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেননি। সীমান্তের কাছে এক অস্থায়ী শিবিরে থাকা এক নারী বলেন, যদি সরকার বলে, আমার গ্রাম নিরাপদ, তাহলে আমি বাড়ি ফিরে যাবো। কারণ এই শিবিরে থাকা খুব কষ্টকর।
এর আগে বৃহস্পতিবার সীমান্তে পুঁতে রাখা একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণে পাঁচ থাই সেনা আহত হয়। তার পর থেকেই টানা সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি বেশ অনিশ্চিত। যদি থাই সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুল্ক ছাড় না পায়, তাহলে সংঘর্ষ আবার শুরু হতে পারে।তারা মনে করছেন, সমস্যার মূল কারণ এখনো দূর হয়নি, তাই স্থায়ী শান্তির জন্য সুনির্দিষ্ট সীমান্ত চিহ্নিতকরণসহ রাজনৈতিক উদ্যোগ জরুরি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল