ইরানের ওপর ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে পাকিস্তান।
ইসরায়েলি এই হামলাকে ‘অন্যায্য ও অবৈধ আগ্রাসন’ হিসেবে বর্ণনা করেছে ইসলামাবাদ।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই নিন্দা জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলা ইরানের সার্বভৌমত্ব ও ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা লঙ্ঘন করেছে এবং এটি জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের মৌলিক নীতিমালার স্পষ্ট পরিপন্থি।
ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “জাতিসংঘ সনদের ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার ইরানের রয়েছে।”
ইসরায়েল শুক্রবার জানায়, তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক কমান্ডারদের লক্ষ্য করে বড় পরিসরে হামলা চালিয়েছে। এই অভিযান দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল আবিব, যার লক্ষ্য— তেহরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে বাধা দেওয়া।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, নাতানজে পারমাণবিক সমৃদ্ধিকরণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর ইসরায়েল দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, প্রতিশোধমূলক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায়।
ইরানের প্রভাবশালী বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানায়, বাহিনীর শীর্ষ কমান্ডার হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন এবং রাজধানী তেহরানে বাহিনীর সদর দফতরেও হামলা হয়েছে। একটি আবাসিক এলাকায় হামলায় কয়েকজন শিশুরও মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম।
এই হামলার কড়া প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান বলেছে, “আমরা ইরানের জনগণের সঙ্গে দৃঢ় সংহতি প্রকাশ করছি এবং এই স্পষ্ট উসকানিমূলক আগ্রাসনের নিন্দা জানাচ্ছি, যা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি-নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি এবং গোটা অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।”
পাকিস্তান আরও বলেছে, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের উচিত অবিলম্বে এই আগ্রাসন বন্ধ করা এবং দোষী পক্ষকে জবাবদিহির আওতায় আনা।”
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে ইরানিদের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর সমবেদনা জানিয়ে বলেন, “এই অযৌক্তিক ও চরমভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীন হামলা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি এমনিতেই উত্তপ্ত একটি অঞ্চলকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।”
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের প্রতি অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান, যাতে সংঘাত আরও গভীর না হয়।
পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার হামলাটিকে ‘ইরানের সার্বভৌমত্বের নগ্ন লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, “এই জঘন্য কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং মানবতার বিবেককেও আঘাত করেছে।”
এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, “এই হামলা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও বৈশ্বিক নিরাপত্তাকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।” তিনি বলেন, পাকিস্তান ইরান সরকার ও জনগণের পাশে রয়েছে।
পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো-জারদারিও ইসরায়েলের ‘এই উসকানিমূলক ও অযৌক্তিক হামলার’ তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এই কঠিন সময়ে আমরা ইরানের জনগণের পাশে আছি। বিশ্বে দায়িত্বশীল সব রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘের উচিত সংঘাত নিরসনে সম্মিলিতভাবে কাজ করা এবং আন্তর্জাতিক আইনকে রক্ষা করা।”
এদিকে পাকিস্তানের সিনেট ও জাতীয় পরিষদ একযোগে একটি প্রস্তাব পাস করেছে, যেখানে ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে নিন্দা জানানো হয়েছে। প্রস্তাবটি সিনেটে উত্থাপন করেন উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দার। সূত্র: জিও টিভি
বিডি প্রতিদিন/একেএ