নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনের ২৪ দফার ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত সমাবেশ থেকে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পর বিকাল ৫টায় জুলাই শহীদ ঈমাম হাসান তাঈমের ভাই রবিউল ইসলামের বক্তব্য দিয়ে সমাবেশের সূচনা ঘটে।
দলীয় নেতারা তাদের বক্তব্যে জুলাই গণ অভ্যুত্থান, বর্তমান এবং আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভাবনার কথা তুলে ধরেন। সহস্রাধিক লোকের উপস্থিতিতে এই সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।
ইশতেহার ঘোষণার পূর্বে নাহিদ ইসলাম বলেন, আজ ঐতিহাসিক ৩ আগস্ট। ঠিক ৩৬৫ দিন আগে শহীদ মিনারে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এখানে সমবেত হয়েছিল। এখান থেকে স্বৈরাচারী সরকার পতনের সেই ঐতিহাসিক এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। কোনো ব্যক্তি, দল বা গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে এক দফা ঘোষণা করা হয়নি। এক দফার কোনো একক ঘোষক নেই। এক দফার একমাত্র মালিক বা ঘোষক হলো এ দেশের জনগণ। তিনি আরও বলেন, ‘সেদিন আমরা এমন একটা বন্দোবস্ত তৈরির ঘোষণা দিয়েছিলাম, যেখানে আর স্বৈরাচার ফিরে আসবে না। আমরা পারিনি। আমরা আমাদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেই আবারও হাজির হয়েছি ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে।’
নতুন সংবিধান ও সেকেন্ড রিপাবলিক গঠনে এনসিপির ঘোষিত ইশতেহারের ২৪ দফার মধ্যে রয়েছে- জুলাই অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি ও বিচার নিশ্চিত করা; গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার; ন্যায়ভিত্তিক বিচারব্যবস্থা ও আইন সংস্কার; সেবামুখী প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন; জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তোলা; শক্তিশালী গ্রাম পার্লামেন্ট ও স্থানীয় সরকার গড়ে তোলা; স্বাধীন গণমাধ্যম ও শক্তিশালী নাগরিক সমাজ বিনির্মাণ; সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা; জাতি গঠনে যুগোপযোগী শিক্ষানীতি গ্রহণ; গবেষণা, উদ্ভাবন ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বিপ্লব সাধন; সকল ধর্ম, সম্প্রদায় ও জাতিসত্তার মর্যাদা নিশ্চিত করা; নারীর নিরাপত্তা, অধিকার ও ক্ষমতায়ন প্রতিষ্ঠা; মানবকেন্দ্রিক ও কল্যাণমুখী অর্থনীতি ব্যবস্থা গড়ে তোলা; তারুণ্য শক্তিকে কাজে লাগাতে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; বহুমুখী বাণিজ্য ও শিল্পায়ননীতি প্রণয়ন; টেকসই কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন; শ্রমিক-কৃষকের অধিকার নিশ্চিত করা; জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা; নগরায়ন, পরিবহন ও আবাসন পরিকল্পনায় আধুনিকায়ন; জলবায়ু সহনশীলতা ও নদী-সমুদ্র রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ; প্রবাসী বাংলাদেশিদের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করা; শক্তিশালী বাংলাদেশপন্থি পররাষ্ট্রনীতি গঠন এবং বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় প্রতিরক্ষানীতিতে শক্তিশালী ও কার্যকরী কৌশল গ্রহণ। সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশে আমরা আর বিভাজনের রাজনীতি দেখতে চাই না। বাংলাদেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার আকাক্সক্ষা নিয়ে আমরা রাজনীতিতে এসেছি। আমরা এমন একটা রাষ্ট্র চাই, যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রতিটি জনপ্রতিনিধিকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রকে সংবিধানে যুক্ত করতে হবে।’ উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘গণ অভ্যুত্থানের এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো আমরা কাক্সিক্ষত বিচার পাইনি। আগামীর বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, তা বলতেই আমরা আজ শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়েছি। আমরা আমাদের শহীদ ভাই ও বোনদের হত্যার বিচার চাইতে এসেছি। আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার অধিকার চাইতে এসেছি। মুজিববাদী সংবিধান বাতিল করে নতুন সংবিধান চাইতে এসেছি। শাপলা, বিডিআর হত্যার বিচার চাইতে এসেছি।’ দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন স্থানে এনসিপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যারা আমাদের হেনস্তা করবেন তাদের আমরা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। প্রয়োজনে জীবন দিতেও প্রস্তুত থাকব।’
আরও বক্তব্য দেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদীব ও সামান্তা শারমিন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব নাহিদা সারওয়ার চৌধুরী নিভা, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ, যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।