ইরানে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে দেশটির শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৭০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ধ্বংস করেছে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনা। এমন হামলায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে ইরান। এখন প্রশ্ন— পাল্টা জবাবে ইরানের হাতে কী আছে? তাদের সামরিক ভাণ্ডারে কী ধরনের অস্ত্র রয়েছে, যা দিয়ে ইসরায়েলকে জবাব দেওয়া সম্ভব? এ নিয়েই সিএনএনের একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরা হলো—
ইসরায়েলি আগ্রাসনের পাল্টা জবাব দিতে ইরানের হাতে যে সামরিক শক্তি আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান IISS-এর ‘মিলিটারি ব্যালান্স ২০২৫’ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর অ্যারোস্পেস ইউনিটের হাতে আছে ১০০টিরও বেশি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ১,০০০ কিলোমিটার বা তার চেয়েও বেশি দূরত্বে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম— অর্থাৎ ইসরায়েল এদের আওতার মধ্যেই।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রভাণ্ডারে রয়েছে দুটি ধরনের প্রযুক্তি— সলিড ফুয়েল চালিত ক্ষেপণাস্ত্র ও লিকুইড ফুয়েল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। লিকুইড ফুয়েল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রে সাধারণত বেশি বিস্ফোরক বহন করা যায় (প্রায় ১,২০০ কেজি), তবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে জ্বালানি ভরার জন্য। অপরদিকে, সলিড ফুয়েলের ক্ষেপণাস্ত্র দ্রুত ছোড়া যায়, যদিও এদের বিস্ফোরণ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে কম (প্রায় ৫০০ কেজি)।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মাত্র ১৫ মিনিটেই ইসরায়েলে পৌঁছাতে পারে।
তবে ক্ষেপণাস্ত্রই একমাত্র অস্ত্র নয়। ইরানের হাতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও, যেগুলো ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে কয়েক ঘণ্টা সময় নিতে পারে। যদিও এদের বিস্ফোরক ক্ষমতা কম এবং ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে এগুলো সহজেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
২০২৪ সালের অক্টোবরেও ইরান প্রায় ২০০টি ড্রোন ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছিল ইসরায়েলের দিকে। তবে সেগুলোর অধিকাংশই আকাশেই ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের যৌথ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ফলে ক্ষয়ক্ষতি ছিল সামান্য।
ইরানের বিমানবাহিনীতে রয়েছে ২৬৫টি যুদ্ধবিমান। তবে এগুলোর বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত পুরনো যুদ্ধবিমান, যেগুলো স্নায়ু যুদ্ধের সময়ের। এসব বিমান দিয়ে ইসরায়েলে পৌঁছাতে হলে আকাশপথে জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হয়। অথচ ইরানের হাতে এমন রিফুয়েলিং বিমানের সংখ্যা ৫-এরও কম।
সব মিলিয়ে ইরানের জবাবদিহি সক্ষমতা যথেষ্ট থাকলেও প্রতিক্রিয়ার বাস্তব ফলাফল নির্ভর করছে সময়, কৌশল ও প্রতিপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ওপর।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল