হীরা গ্রুপের বিতর্কিত প্রতিষ্ঠাতা এবং ২ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন দিরহাম ‘হীরা গোল্ড কেলেঙ্কারি’র প্রধান অভিযুক্ত নওহেরা শেখকে ভারতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০১৮ সালের জালিয়াতির মামলায় তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ তিনটি জামিন অযোগ্য পরোয়ানা (এনবিডব্লিউ) কার্যকর করার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হায়দারাবাদ সেন্ট্রাল ক্রাইম স্টেশন (সিসিএস) এর গোয়েন্দারা তাকে গ্রেফতার করে।
তার গ্রেফতার এমন একটি মামলার বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যা হাজার হাজার বিনিয়োগকারীকে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে, যাদের অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতের নাগরিক।
হীরা স্কিমে বিনিয়োগ করে আরব আমিরাতের বেশ কয়েকজন নাগরিক তাদের জীবন সঞ্চয় হারিয়েছেন, কেউ কেউ এখনও তাদের বিনিয়োগ তহবিলের জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ করতে লড়াই করে যাচ্ছেন।
পুলিশের মতে, ফরিদাবাদের সুরজকুন্ড এলাকায় ভ্রমণের সময় নওহেরাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
স্থানীয় আদালতে হাজির করতে তাকে হায়দারাবাদে নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিসিএসের ডেপুটি কমিশনার এন. স্বেতা।
২০২৪ সালের অক্টোবরে সুপ্রিম কোর্ট নওহেরার জামিন বাতিল করে আত্মসমর্পণের নির্দেশের দেন। একাধিক সুযোগ এবং শর্তসাপেক্ষ সমন সত্ত্বেও তিনি আদালতে হাজির হননি। ফলে কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতারে সচেষ্ট হয়।
নওহেরার নেতৃত্বে হীরা গ্রুপের বিরুদ্ধে পঞ্জি-স্টাইলের একটি স্কিম চালানোর অভিযোগ রয়েছে, যেখানে হীরা গোল্ড, হীরা টেক্সটাইল এবং হীরা ফুডেক্সের মতো ব্যবসার মাধ্যমে মাসিক ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত রিটার্ন এবং বার্ষিক ৮০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালে কোম্পানিটি হঠাৎ করে অর্থ প্রদান বন্ধ করে দেয়। এতে দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের এক লাখেরও বেশি বিনিয়োগকারীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এর আগে ২০১৮ সালে প্রথম গ্রেফতার হন নওহেরা। তবে সেবার তিনি জামিনে মুক্তি পান। তারপর থেকে ভারতজুড়ে তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক অপরাধ শাখা কর্তৃক নতুন মামলা এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট কর্তৃক ১২৪টি সম্পত্তি জব্দের মামলা। এগুলোর মধ্যে ২৮টি মামলা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দায়ের করা হয়।
অল ইন্ডিয়া হীরা গ্রুপ ভিকটিমস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহবাজ আহমেদ খান নওহেরার গ্রেফতারকে স্বাগত জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, “মানুষের জীবন যখন বিপর্যস্ত হচ্ছিল, তখন তিনি (নওহেরা) আদালতের হাজিরা এড়িয়ে চলছিলেন। তাকে জবাবদিহি করার সময় এসেছে।”
তিনি বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে নতুন অভিযোগ আসতেই আছে। তার জন্য মানুষ এখনও সমস্যায় দিনাতিপাত করছে। এমনকি কেউ কেউ তাদের ঘরবাড়ি পর্যন্ত হারিয়েছে।
এই বছরের শুরুতে, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট নওহেরা শেখকে তিন মাসের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন রুপি (প্রায় ১০.৫৭ মিলিয়ন দিরহাম) জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অন্যথায় তার জামিন বাতিলের ঝুঁকি নিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন আদালত। তবে এই শর্তটি তিনি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সূত্র: খালিজ টাইমস, দ্য হিন্দু
বিডি প্রতিদিন/একেএ