চিকুনগুনিয়া কী : * চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাসজনিত রোগ, যা মশার কামড়ে (এডিস মশা) ছড়ায়। * এটি চিকুনগুনিয়া ভাইরাস (CHIKV) দ্বারা সংক্রমিত হয়। * সাধারণত বর্ষাকালে এর প্রকোপ বেশি দেখা যায়।
চিকুনগুনিয়ার প্রধান উপসর্গ : * হঠাৎ উচ্চমাত্রার জ্বর (102–104°F) * তীব্র জোড়ার ব্যথা (বিশেষ করে হাত, পা, কবজি, গোড়ালি, আঙুলের জোড়ায়)
* পেশির ব্যথা, * ত্বকে ফুঁসকুড়ি/র্যাশ
* মাথাব্যথা, * দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা
* চোখে ব্যথা বা লাল হওয়া
সাধারণত জ্বর ৩ x৭ দিন থাকে, তবে জোড়ার ব্যথা অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি হয়।
চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী ব্যথার কারণ : ১. ভাইরাসজনিত প্রদাহ (Post-viral arthritis):* চিকুনগুনিয়া ভাইরাস জোড়ার Synovial fluid এ প্রদাহ তৈরি করে। * জোড়ার আশপাশের টিস্যুতে (ligament, tendon) প্রদাহ থেকে যায়।
২. ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া: * ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অতিরিক্ত কাজ করে প্রদাহ দীর্ঘায়িত করে।
৩. জোড়ার তরলের পরিমাণ ও গুণমান পরিবর্তন :* হাড়ের মাথার সঙ্গে সঙ্গে জোড়ার তরল ও কার্টিলেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে ব্যথা থেকে যায়।
৪. নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা: * বিশ্রাম ও ব্যথার কারণে জোড়ার নড়াচড়া কম হয়, ফলে Rigidity ও Stiffness তৈরি হয়। এ কারণে চিকুনগুনিয়ার পর ৩-৬ মাস পর্যন্ত ব্যথা থাকতে পারে, কিছু ক্ষেত্রে ১-২ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে যত্নবান হতে হবে।
চিকুনগুনিয়া-পরবর্তী ব্যথার চিকিৎসা :
বিশ্রাম ও নড়াচড়া সমন্বয় : অতিরিক্ত বিশ্রাম না নিয়ে হালকা নড়াচড়া ও ফিজিওথেরাপি করতে হবে। হাত-পায়ের জোড়াগুলোকে ধীরে নাড়াচাড়া করতে হবে।
ওষুধ : ব্যথা ও প্রদাহ কমানোর জন্য : প্যারাসিটামল (ব্যথা থাকলে), প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শে নন-স্টেরয়েড এন্টি-ইনফ্লেমেটরি ড্রাগ (NSAIDs)
* দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে DMARDs দেওয়া যেতে পারে।
ফিজিওথেরাপি : রেঞ্জ অব মোশন (ROM) এক্সারসাইজ : জোড়ার নড়াচড়া ধরে রাখতে সহায়তা করে। Stretching Exercise: পেশির শক্তি ধরে রাখতে। Strengthening Exercise: পেশি ও জোড়ার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে। হাত/পা গরম পানিতে ১০-১৫ মিনিট ভিজিয়ে নিলে ব্যথা ও Stiffness কমে।
গরম বা ঠান্ডা সেঁক : সাধারণত গরম সেঁক ব্যথা ও Stiffness কমাতে উপকারী।
ব্যথা তীব্র হলে ঠান্ডা সেঁক দেওয়া যেতে পারে।
পুষ্টিকর খাবার ও হাইড্রেশন : পর্যাপ্ত পানি পান। সবজি, ফলমূল, ওমেগা-৩ যুক্ত খাবার (মাছ) প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। ভিটামিন D ও ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার হাড় ও জোড়ার জন্য ভালো।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ : ব্যথা ১ সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে, জোড়ার ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে গেলে, চলাফেরায় সমস্যা হলে, অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ওজন কমে গেলে।
পরামর্শ : চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ, যা জ্বর ও তীব্র জোড়ার ব্যথা সৃষ্টি করে। ভাইরাসের কারণে ও ইমিউনের প্রতিক্রিয়ায় post-viral arthritis হয়, যা ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী করে। চিকিৎসার জন্য ব্যথা নিয়ন্ত্রণ, হালকা ব্যায়াম, ফিজিওথেরাপি, সঠিক খাদ্য এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গুরুত্বপূর্ণ। * নিয়মিত ফলো-আপ এবং চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে ধীরে ধীরে ব্যথা ও দুর্বলতা কমে যায়। তাই চিকুনগুনিয়া হলে অবহেলা করা ঠিক হবে না। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের এ বিষয়ে যথেষ্ট যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।
লেখক : এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।