বর্তমানে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারীদের মধ্যে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএসের হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে চারজন কোনো না কোনোভাবে পিসিওএসের সমস্যায় আক্রান্ত। এর পেছনে দায়ী অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস এবং জাঙ্ক ফুডের প্রতি আসক্তি। অথচ পুষ্টির মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা করলে পিসিওএস ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হতে পারে।
পিসিওএস কী এবং এর প্রধান উপসর্গ :
পিসিওএস একটি হরমোনজনিত সমস্যা, যেখানে শরীরে ফিমেল হরমোন-এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন, মেইল হরমোন-অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং আল্ট্রাসাউন্ড করলে ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট সিস্ট দেখা যায়। এর ফলে দেখা দেয় নানাবিধ উপসর্গ, যেমন :
*অনিয়মিত অথবা বন্ধ পিরিয়ড : অনেকের এমনও দেখেছি যে বছরের পর বছর পিরিয়ড বন্ধ।
*ওজন বৃদ্ধি বা ওজন কমাতে সমস্যা * মুখ ও শরীরে অতিরিক্ত লোম গজানো (Hirsutism) *ত্বকে ব্রণ বা একনের সমস্যা *মাথার চুল পাতলা হয়ে যাওয়া বা চুল ঝরে পড়া *মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা *ঘাড়ে কালো দাগ (Acanthosis Nigricans) *ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স, যা পরবর্তী সময়ে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই সচেতন হতে হবে।
পিসিওএস ব্যবস্থাপনায় জীবনধারা পরিবর্তনের ভূমিকা : পিসিওএসের কোনো স্থায়ী চিকিৎসা নেই, তবে জীবনধারা ও পুষ্টির মাধ্যমে এর উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন পিসিওএস রোগীদের জীবনে আশাতীত উন্নতি আনে।
১. ওজন নিয়ন্ত্রণ : ওজন কমালে হরমোনের ভারসাম্য অনেকাংশে ফিরিয়ে আনা যায়। এ ক্ষেত্রে প্রফেশনালদের পরামর্শে ডায়েট করা উচিত। কারণ, ডায়েট করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাসল লস না হয়ে ফেট লস হয়। আর ফেট লস হলেই পিসিওএস থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস : কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার গ্রহণ উত্তম। যেমন : লাল চাল, ওটস, বার্লি, ব্রাউন ব্রেড। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত প্রোটিন (মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, ডিমের সাদা অংশ) এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত সবজি ও ফলমূল (আপেল, কমলা, বেরি-জাতীয় ফল) রাখা জরুরি। চিনিযুক্ত খাবার, সফট ড্রিঙ্কস-ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলতে হবে।
৩. নিয়মিত ব্যায়াম : ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স কমাতে সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম প্রয়োজন। পিরিয়ড রেগুলার করতেও কিছু ব্যায়াম রয়েছে।
৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ : স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল বাড়লে পিসিওএসের উপসর্গ আরও খারাপ হয়। প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন অথবা deep breathing exercise রোগীকে মানসিকভাবে স্থির থাকতে সাহায্য করে।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম : প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম শরীরের হরমোনাল ইকুইলিব্রিয়াম বজায় রাখতে অপরিহার্য। প্রতিটি রোগীর শারীরিক অবস্থা ভিন্ন, তাই পিসিওএস ম্যানেজমেন্টের জন্য ব্যক্তিগত পুষ্টি পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ। কখনো প্রয়োজন হতে পারে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণেরও। পিসিওএস কোনো নিরাময়যোগ্য সমস্যা না হলেও সঠিক জীবনধারা ও পুষ্টি পরিকল্পনার মাধ্যমে এর প্রভাব কমানো সম্ভব।
লেখক : শাইমা জাহান, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট অ্যান্ড ডায়েট কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা