নিম্নআয়ের মানুষের স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে শহরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে। গত পাঁচ বছরে ব্র্যাক পরিচালিত একটি প্রকল্পের আওতায় স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহারের হার ১০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৯ শতাংশে পৌঁছেছে। একই সময়ে নিরাপদ পানি ব্যবহারের হার ৫১ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৮০ শতাংশ। নারীদের মধ্যে স্যানিটারি প্যাড ব্যবহারের হার ৫৩ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০ শতাংশে।
এছাড়া অন্তত চারবার প্রসবপূর্ব সেবা গ্রহণের হার ৪৫% থেকে বেড়ে ৭১%-এ উন্নীত হয়েছে, আর প্রসব-পরবর্তী সেবা নেওয়ার হার ২১% থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৯%। বর্তমানে ৯৪% পরিবার তাদের পানির পাত্র ঢেকে রাখে এবং মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণের হার ৫৪% থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫%-এ।
এই তথ্যগুলো উঠে এসেছে ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত একটি কর্মশালায়। ‘স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেবার জন্য সমন্বিত পুনর্বাসন কর্মসূচি’ বিষয়ক পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের ফলাফল ও নীতিগত সুপারিশ উপস্থাপন করতে ব্র্যাক এই কর্মশালার আয়োজন করে।
এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এবং সৈয়দপুর পৌরসভার ঘনবসতিপূর্ণ ও অবহেলিত নগর এলাকায়। অর্থায়ন করে কিং আবদুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ প্রোগ্রাম এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএসডিবি)। লক্ষ্য ছিল মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও স্বাস্থ্যবিধি চর্চার উন্নয়ন। এই এলাকার জনসংখ্যা ৫৪ লাখের বেশি, কোথাও কোথাও প্রতি বর্গকিলোমিটারে দুই লাখের বেশি মানুষ বসবাস করে—যেখানে নিরাপদ পানি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ভয়াবহ সংকট রয়েছে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচি, নগর উন্নয়ন কর্মসূচি ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক ড. মো. লিয়াকত আলী; কিং আবদুল্লাহ প্রোগ্রামের কান্ট্রি কোঅর্ডিনেটর ও আইএসডিবির প্রতিনিধি মো. আরিফ শহীদ; ব্র্যাক স্বাস্থ্য কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক ডা. শায়লা ইসলাম এবং ডিএনসিসি'র বিভিন্ন জোনাল কর্মকর্তাবৃন্দ।
কর্মশালায় জনস্বাস্থ্য নীতি ও গবেষণা বিশেষজ্ঞ এবং ভালো অ্যাভান্ট-গার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নাজনীন আখতার একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আলোচনায় অংশ নেন ব্র্যাক নগর উন্নয়ন কর্মসূচির প্রধান ইমামুল আজম শাহী এবং ঢাকা ও সৈয়দপুরের বিভিন্ন কমিউনিটি প্রতিনিধি।
তারা বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নগর বস্তিগুলোতে স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অংশীদারিত্ব ও সম্মিলিত উদ্যোগ জরুরি। এই প্রকল্পের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের নগর স্বাস্থ্য নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মত দেন বক্তারা।
বিডি প্রতিদিন/আশিক