বাজেট বাস্তবায়নে গতি নেই। দেশ স্বাধীনের পর গত ৪৮ বছরে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে বাজেট বাস্তবায়নের হার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসে এডিপি বাস্তবায়ন নেমে গেছে তলানিতে।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বাজেট বাস্তবায়নের সঙ্গে জড়িত মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে গতি বাড়াতে কড়া বার্তা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়নের হার না বাড়ার কারণ অনুসন্ধান করছে অর্থ বিভাগ ও পরিকল্পনা কমিশন। সরকারি কোনো প্রকল্পের কাজে কাঙ্ক্ষিত গতি নেই। অর্থছাড় প্রক্রিয়া সহজ করা হলেও বরাদ্দ অর্থ খরচ করতে পারছে না মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। পতিত সরকারের রেখে যাওয়া অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়েছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ এবং পুরোনো প্রয়োজনীয় কোনো প্রকল্পই বাদ দেওয়া হয়নি। আবার প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তবু সরকারের বাজেট বাস্তবায়নে তেমন ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি গত এক বছরে।
সূত্র জানান, দীর্ঘদিনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, প্রশাসনিক অদক্ষতা ও জেঁকে বসা অনিয়ম-দুর্নীতির চক্র পুরোপুরি ভাঙতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। প্রশাসনের কোনো কোনো স্তরে এখনো দুর্নীতিবাজ ও অদক্ষ কর্মকর্তারা সক্রিয় রয়েছেন বলে মনে করছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও অর্থ বিভাগ। এজন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিদায়ের বছর পেরিয়ে গেলেও বাজেট বাস্তবায়নের হার বাড়ানো সম্ভব হয়নি। বরং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার উল্টো কমেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোতে সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের মধ্যে এডিপি বাস্তবায়নের আনুপাতিক হার বাড়াতে না পারলে দায়ী কর্মকর্তা বা প্রতিষ্ঠানকে ভর্ৎসনা করা হবে। কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পেলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। একই সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এডিপি বাস্তবায়নে বেশি পিছিয়ে রয়েছে সেসব বিভাগে মনিটরিং জোরদারের নির্দেশনা দিয়েছে অর্থ বিভাগ। এ ছাড়া ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, সেটা ঠিক থাকলে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরেই বাজেট সংশোধন করা হবে। রীতি অনুযায়ী যা প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে করা হয়। নির্বাচনের কারণে এবার সেটা আগাম করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরে যা বাস্তবায়ন হয়েছে তা গত ৪৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মাত্র ৬৮ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাস হিসেবে জুলাইয়ে এডিপির ১ শতাংশের কম বাস্তবায়িত হয়েছে। এর আগে সবচেয়ে কম বাস্তবায়নের রেকর্ড ছিল ২০২৩-২৪ অর্থবছরে। ওই অর্থবছর বাস্তবায়নের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। এমনকি মহামারি করোনাকাল লম্বা সময় লকডাউনে থাকার বছরও এর চেয়ে বেশি হারে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাস্তবায়ন ছিল ৮২ দশমিক ১১ শতাংশ। বর্তমানে বাস্তবায়নের গতি কমে যাওয়ায় তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও অর্থ বিভাগ।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা উপদেষ্টা সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ১ শতাংশের কম এডিপি বাস্তবায়নের কারণ আমরা খতিয়ে দেখছি। আগামী নির্বাচনের আগেই বাজেট সংশোধন করা হবে।