শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ লিভার বা যকৃৎ। প্রতি বছরের ১৯ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব যকৃৎ দিবস। এবছরের দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল 'সতর্ক থাকুন, নিয়মিত লিভার চেক-আপ করুন এবং ফ্যাটি লিভারের রোগ প্রতিরোধ করুন'।
পরিপাকতন্ত্রের প্রধান অঙ্গ হলো লিভার। আমরা ঔষধ থেকে শুরু করে যা কিছু খাই বা পান করি, সবকিছু পরিপাক হওয়ার পর রক্তে মিশে লিভারে যায়। সুতরাং লিভারের যথাযথ যত্ন নেওয়া যাতে লিভার সুস্থ থাকে এবং তার কাজ ঠিকঠাক করতে পারে। লিভারে একবার সমস্যা হলে আর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। লিভারের প্রধান কাজ হলো শরীরের দ্রুত এনার্জি পাওয়ার জন্য গ্লুকোজ স্টোর করে রাখা। এটি বাইল নামে এক ধরনের লিকুইড তৈরি করে যা খাবার থেকে চর্বি ভাঙ্গতে সাহায্য করে। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই লিভারকে সুস্থ রাখে।
আগেই লিভারের যত্ন
লিভার নষ্ট হওয়ার খুব সাধারণ একটা কারণ হলো অতিরিক্ত মদপান। মদপানে লিভার ড্যামেজ, ফ্যাটি লিভার এমনকি লিভার ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে । অতিরিক্ত ঔষধ খাওয়ার কারণে লিভার কর্মক্ষমতা হারায়। ঠান্ডা ও জ্বরের জন্য বহুল ব্যবহৃত ঔষধের অনেকাংশেই লিভারের ক্ষতি করে। সুতরাং, জ্বর বা ঠান্ডা লাগলেই সঙ্গে সঙ্গে ঔষধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। লিভারের ক্ষতির আর একটি কারণ হচ্ছে ধূমপান। সিগারেটের উপাদানগুলো সরাসরি লিভারের উপর প্রভাব ফেলে লিভার টিস্যু নষ্ট করে।
তাছাড়াও লিভারের স্বাভাবিক কাজেও বাধা সৃষ্টি করে। নিয়মিত কম ঘুম লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস তৈরি হয়। এছাড়া যারা রাতে ঘুমের সমস্যায় ভোগেন তারা ওবেসিটি, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ এর পাশাপাশি লিভার সংক্রান্ত সমস্যায়ও ভোগেন। পুষ্টিকর খাবারের অভাব কিংবা খাবারে অনিয়ম লিভারের ক্ষতি করে থাকে। সকালে না খাওয়া, শাক, খারাপ তৈল বা অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার খাওয়া, পোড়া তেলের খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া, অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড খাওয়ার কারণে লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়।
কেমিক্যাল সমৃদ্ধ যেকোনো খাবারই লিভারের জন্য ক্ষতিকর। আমরা অনেকেই প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল ফুড কালার, আর্টিফিশিয়াল চিনি যুক্ত খাবার পছন্দ করি। যা লিভারের জন্য সুফল বয়ে আনে না। তাছাড়া, বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস, প্যারাসাইট, ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিকতা, বংশগত কারণ কিংবা ক্যান্সারের কারণেও লিভার ড্যামেজ হতে পারে।
লিভারের যত রোগ
লিভার নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কিছু রোগ আছে বংশগত, কিছু আমাদের অর্জিত, কিছু রোগ স্বল্পস্থায়ী এবং কিছু দীর্ঘস্থায়ী কয়েকটি কমন লিভার সমস্যা হচ্ছে, জন্ডিস, পিত্তে পাথর, হেপাটাইটিস সি, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যান্সার, উইলসন্স।
করণীয়
আপনি যদি স্থূল বা ওজন বেশি হয় তাহলে আপনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন। লিভার ফ্যাট কমিয়ে সুস্থ থাকতে ওজন কমাতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্যাভাস লিভারকে সুস্থ রাখে। এছাড়া উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যেমন- সাদা পাউরুটি, পাস্তা এবং চিনি এড়িয়ে চলতে হবে। কাঁচা এবং আধা সিদ্ধ মাছ-মাংস খাওয়া বাদ দেওয়া । প্রতিদিনকার খাবারে তাজা ফল, শাক সবজি, লাল চাল এবং সিরিয়াল রাখতে পারেন।
তাছাড়া, রসুন, জাম্বুরা, গাজর, গ্রিন টি, অ্যাভোকাডো, আপেল, অলিভ অয়েল, লেবু, বাঁধাকপি, হলুদ লিভারের জন্য বেশ উপকারী। লিভার এবং কিডনী দুটোই সুস্থ রাখার জন্য হাইড্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং বেশি পরিমানে পানি পান করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম লিভার সুস্থ রাখার বড় ঔষধ।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক, আলোক হেলথ কেয়ার লি. মিরপুর -১০ ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/মুসা