ধরুন, একজন রোগী রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত। এই রোগের কারণে অস্থিসন্ধিতে মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা হয়। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত দুই ধরনের : প্রথমত, ব্যথা নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়। তবে এই ওষুধ শুধু ব্যথা কমায়, রোগ সারায় না। রোগটি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজন হয় ডিজিজ মডিফাইং ড্রাগ। এই ওষুধ রোগের মূল কারণকে টার্গেট করে এবং দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতা নিশ্চিত করে। একইভাবে, কোমর বা ঘাড় ব্যথা কোনো রোগ নয়, এটি রোগের লক্ষণ মাত্র। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো শুধু ব্যথানাশক ওষুধ বা কিছু সাধারণ ব্যায়াম করে সাময়িকভাবে ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, কিন্তু ব্যথার মূল কারণ দূর করতে হলে রোগ সারানোর চিকিৎসা বা ডিজিজ মোডিফাইং ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন। এটা জরুরি।
রোগ সারানোর চিকিৎসা কী?
ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে অসুস্থ হলে আমরা যে অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স করি, সেটাই সহজ ভাষায় রোগ সারানোর চিকিৎসা। কিন্তু শারীরিক ব্যথার ক্ষেত্রে কারণগুলো এত সুনির্দিষ্ট নয়, এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো মোডিফাই করার জন্য কোনো ওষুধ নেই। তাই ব্যথার কারণ দূর করতে আমাদের নির্ভর করতে হয় সুনির্দিষ্ট ব্যায়ামের ওপর। অনেকেই প্রশ্ন করেন, ব্যায়াম তো ব্যায়ামই, এর আবার প্রকারভেদ কী? আসলে, নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে যেমন সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন, তেমনি ব্যথার সঠিক কারণ নির্ণয় করে সুনির্দিষ্ট ব্যায়াম করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনার কোমর ব্যথার কারণ হলো স্পন্ডাইলোলিসথেসিস বা হাড় সরে যাওয়া। এক্ষেত্রে যদি আপনি ব্যাক এক্সটেনশন এক্সারসাইজ করেন, তাহলে তা হিতে বিপরীত ফল আনতে পারে। আবার অনেক দীর্ঘমেয়াদি কোমর ব্যথা মানসিক কারণেও হতে পারে, সেক্ষেত্রে কোনো ব্যায়ামই কাজ করবে না।
রোগীদের করণীয় কী?
ইউটিউব বা ফেসবুকে ব্যথা সারানোর নানা ধরনের ব্যায়ামের কৌশল দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ধরনের ব্যায়াম কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনে। ইউটিউব দেখে ব্যায়াম করে কোমর, ঘাড় বা হাঁটুর ইনজুরিতে পড়া রোগীর সংখ্যা নেহাত কম নয় এবং এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যেক মানুষের শরীর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায় ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় এবং ভিন্ন চিকিৎসার প্রতি সংবেদনশীল থাকে। সারা বিশ্বে তাই পার্সোনালাইজড চিকিৎসার গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। পার্সোনালাইজড চিকিৎসার মূল মন্ত্র হলো রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা প্রদান করা। এ ধরনের চিকিৎসার ফলাফল সাধারণত খুবই ভালো হয়।
মনে রাখবেন, অসুস্থ হলে আপনি যেমন চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে সেবন করে বিপদ ডেকে আনবেন না, ঠিক তেমনি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখানো জনপ্রিয় কিন্তু ভুল ব্যায়াম করে ব্যথা বাড়িয়ে তুলবেন না। সঠিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন। সবচেয়ে বড় কথা এসবক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় সচেতন হতে হবে। আমরা প্রায়ই ব্যথা নিয়ে অবহেলা করে থাকি। যা মোটেও ঠিক নয়। কথায় আছে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। তাই এসব নিয়ে আমাদের আরও বেশি যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।
লেখক : কোমর ব্যথা বিষয়ক গবেষক, বিভাগীয় প্রধান, ফিজিওথেরাপি বিভাগ, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা, ঢাকা।