জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি আদেশ প্রস্তুত করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন। এনসিপি এটিকে অগ্রগতি হিসেবে দেখছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে এ আদেশের ড্রাফট দেখাতে চায়নি কমিশন। একই সঙ্গে তিনি জানান, নির্বাচনি জোট গঠন প্রশ্নে এনসিপির দুয়ার সব দলের জন্য খোলা রয়েছে।
গতকাল জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। সকাল সোয়া ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত বৈঠক চলে।
বৈঠকে অংশ নেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ, সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য) মনির হায়দার প্রমুখ। এনসিপির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সদস্যসচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ ও যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা। বৈঠক শেষে আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত নিজেদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করে সাংগঠনিক পরিসর বৃদ্ধিতে কাজ করছি। যদি জাতীয় স্বার্থে দেশের প্রয়োজনে জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, আমরা সে জোটের জন্য ওপেন রয়েছি।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের একটি আদেশ প্রস্তুত করছে জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘এনসিপি এটিকে অগ্রগতি হিসেবে দেখছে। এ আদেশের মূল বক্তব্য কী, সে বিষয়গুলো জানাতে ঐকমত্য কমিশন অপারগতা প্রকাশ করেছে।’ ফলে এনসিপি এখনো আশাবাদী হতে পারছে না বলে জানান তিনি। ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, তাঁরা প্রত্যাশা করেন কমিশন যে খসড়া প্রস্তুত করছে, সেটা তাঁদের সঙ্গে তাঁরা শেয়ার করবেন। এতে পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত হয়ে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের দিকে অগ্রসর হওয়া যাবে। জুলাই সনদের জন্য কমিশন যে খসড়া করেছে, তা যেন কোনোভাবেই কোনো এক দলের পক্ষপাতিত্বমূলক না হয় সে দাবি জানায় এনসিপি। এ খসড়া যেন জাতির সবার একটা সম্পদ হতে পারে, সেটাই তাঁরা নিশ্চিত করতে চান বলে জানান।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকবে জানিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, সে হিসেবেই ঐকমত্য কমিশন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মধ্যে আজ একটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনা অনানুষ্ঠানিকভাবেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনেক রাজনৈতিক দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিলেও দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এক দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর মুছে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে, আরেকটি দল জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ভেস্তে দেওয়ার সুযোগ খুঁজছে। এ অবস্থায় এনসিপি মনে করে জুলাই সনদের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নই কেবল এ সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারে।
নির্বাচনি জোট প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নকে আমরা নির্বাচনি আসন ভাগাভাগির অংশ হিসেবে দেখতে প্রস্তুত নই। আমরা মনে করি সনদ বাস্তবায়নপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে পরেই নির্বাচনি জোট। নির্বাচনমুখী যে আসনের ব্যাপারগুলো রয়েছে, সে বিষয়গুলোতে আমরা পরিষ্কার সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারব।’ আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি দল তাদের যে প্রতীক আছে, সে প্রতীকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং এনসিপি যেন শাপলা প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সে কারণে আমাদের সংগ্রাম জারি রেখেছি।’
এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের দলের যারা প্রার্থী হবেন বিভিন্ন আসনে, সেটা আমরা আপনাদের কাছে উপস্থাপন করব। জোটের বিষয়ে আবারও বলি যে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো দলের সঙ্গে সুনিশ্চিতভাবে জোটসংক্রান্ত আলোচনার সূত্রপাত করিনি। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বিষয়গুলো নিয়ে প্রায় প্রতিটি দলের সঙ্গেই আমাদের আলোচনা চলছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জায়গাটা সুনিশ্চিত হলেই এ সনদে স্বাক্ষর করার ব্যাপারে এনসিপির আগ্রহ রয়েছে।’