২৫ বছর বয়সি মাইদুল হাসান পেশায় নির্মাণশ্রমিক। বাড়ি বরিশাল। ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়ে মাকে নিয়েই থাকেন নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে। কঠোর পরিশ্রমে বড় বোনের বিয়েও দিয়েছেন তিনি। জীবনের কষ্ট যেন তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি।
কিন্তু ২১ অক্টোবরের এক বিকালেই সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। ওষুধ আনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠেছিলেন মাইদুল। পথিমধ্যে দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। এখন তার ঠিকানা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান, যেটি সবার কাছে ‘পঙ্গু হাসপাতাল’ নামে পরিচিত।
অপারেশনের পর নিচতলায় রাখা হয় তাকে। প্রথম দিন হাসপাতালের ভিতর থেকে বিনামূল্যে একটি ট্রলি পাওয়া গেলেও সেই ট্রলি নিয়ে যেতে দায়িত্বে থাকা আয়াকে দিতে হয়েছে ২০০ টাকা। এরপর থেকে যখনই আয়া বা ওয়ার্ডবয়ের সাহায্য নিয়েছেন, দিতে হয়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল সকালে পঙ্গু হাসপাতালের পঞ্চম তলার ইসিজি রুমের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে। শয্যাশায়ী মাইদুল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সব জায়গায় লেখা আছে, বিনামূল্যে সেবা। কিন্তু বাস্তবে কারও সাহায্য লাগলে টাকা না দিলে কেউ আসে না। মাইদুলের মতো অনেক রোগী ও স্বজনই একই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে একটি কক্ষ ‘ট্রলি স্টেশন’। এখানে রোগীর তথ্য দিয়ে বিনামূল্যে ট্রলি বা হুইলচেয়ার নেওয়া যায়। আগে ৩০০ টাকা জামানত নেওয়া হলেও এখন তা বন্ধ। কাগজে-কলমে সবই বিনামূল্যে, কিন্তু বাস্তবে অন্য হিসাব চলে। হাসপাতালের কিছু আয়া ও অস্থায়ী কর্মচারী রোগীদের ডাক্তার বা কেবিনে পৌঁছে দেওয়ার নামে টাকা নিচ্ছেন নিয়মিত। পঞ্চাশোর্ধ্ব কয়েকজন নারী এসব কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কেউ কেউ টাকার ভাগ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডায়ও জড়ান।
রোগীর স্বজনরা বলছেন, সেবার নামে এই টাকা আদায় আগের মতোই চলছে। কেউ বিনামূল্যে সাহায্য করতে চান না। রোগীকে হুইলচেয়ারে করে ডাক্তার দেখাতে নিলে ২০০ টাকা দিতে হয়। যদি কেবিনে নিতে হয় তাহলে ৩০০-৪০০ টাকাও দিতে হয়। না দিলে মুখ ভার করে, অনেকে তো আসেই না।
মাজহার হোসেন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘আমার ভাতিজা খেলতে গিয়ে পা ভেঙেছে। তিন দিন ধরে ভর্তি আছি। প্রতিদিন ড্রেসিং করতে হয়। ওয়ার্ড বয়ের সাহায্য ছাড়া কাজ হয় না। বিনিময়ে ১০০ টাকা দিলে নেয় না, ২০০ টাকা দিতেই হয়।’
হাসপাতাল পরিচালক আবুল কেনান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এরকম কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। কোনো রোগী বা তার স্বজন যদি কোনোভাবে ভোগান্তির শিকার হন তাহলে লিখিত অভিযোগ দিতে বলুন। আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’