ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খোদ মন্ত্রণালয় থেকে মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। সচিবের সব শূন্য পদ পূরণ করা হবে। জেলায় ডিসি, এডিসি, ইউএনও পরিবর্তন করা হবে। একই সঙ্গে পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পর্যায়েও পরিবর্তন হবে বলে জানা গেছে। আগামী মাসের মধ্যে এই পরিবর্তন আসবে বলে প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ইতোমধ্যেই প্রশাসনে ধীরে ধীরে রদবদল হচ্ছে।
প্রশাসনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কাউকে এই নির্বাচনে রাখতে চাচ্ছে না সরকার। সেভাবেই প্রস্তুতি চলছে। খালি থাকা কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া রদবদলও হতে পারে। মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও ব্যাপক রদবদল করা হবে। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব যোগ দিয়েছেন। সূত্র মতে, জনপ্রশাসনের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগে (এপিডি) নিয়োগ পেলে রদবদল আরও দ্রুত গতিতে কাজ এগোবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে কর্মকর্তাদের রদবদল করা হবে। নির্বাচন কমিশন চাইলে তফসিল ঘোষণার পরও রদবদল হবে। প্রশাসনে ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যেই ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তারা যুগ্ম সচিব হয়েছেন তাদের মাঠ থেকে তুলে আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে নতুন ডিসি দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে ২৪ ব্যাচের ডিসিদের তুলে আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। সেক্ষেত্রে কয়েকজন ২৮তম বিসিএসের কর্মকর্তাকে মাঠে পাঠানো হবে। নির্বাচনের সময় ডিসিরা রিটার্নিং অফিসার এবং ইউএনও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হন। বর্তমানে ৩৪, ৩৫ এবং ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তারা ইউএনও হিসেবে আছেন। অনেক জেলায় ৩৪ এবং ৩৫ ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের দায়িত্বেও আছেন। সূত্র জানায়, খুব দ্রুতই মাঠ থেকে ৩৪ ব্যাচের সব ইউএনওদের তুলে আনা হবে। সেখানে ৩৫ ও ৩৬ ব্যাচের কর্মকর্তা পাঠানো হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনের আগে ৩৭ ব্যাচ থেকেও ইউএনও মাঠে পাঠানো হবে। অনেক ইউএনওর উপজেলা বদল করা হবে। ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে ইউএনওদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ১১ নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ ব্যাচভিত্তিক হওয়ার কথা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়েও বড় রদবদল আসবে। বর্তমানে ২৪, ২৫ এবং ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তারা মাঠে এসপি হিসেবে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ব্যাচের কর্মকর্তাদের তুলে আনা হবে। সূত্র জানায়, নির্বাচনের আগে ২৮ ব্যাচের দু-চারজনকে এসপি হিসেবে মাঠে পাঠানো হবে। এ ছাড়া মাঠে থাকা কর্মকর্তাদের জেলা বদল করা হতে পারে। কয়েকটি বড় জেলার এসপি পরিবর্তন করা হবে বলেও জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রটি। এর আগে এক উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, নির্বাচনের আগে এসপি ও ওসিদের লটারির মাধ্যমে পদায়ন করা হবে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সব সরকারই মাঠ প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। সময় কম, দ্রুতই এই কাজটি করতে হবে। যাকে দায়িত্ব দেবে সরকার তারও ওই এলাকা চিনতে হবে।
এলাকা বিষয়ে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। রদবদলের ক্ষেত্রে দক্ষ, অভিজ্ঞ ও সাহসী কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ দিতে হবে। কোনো ব্যক্তি বা দলের তদবির শুনলে হবে না।