ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) মান বাড়িয়ে সুউচ্চ ভবন নির্মাণে যেমন বিপর্যস্ত হবে পরিবেশ, তেমনি এফএআর কমালে তৈরি হবে আবাসন সংকট। এমন বাস্তবতায় ঢাকাকে বাঁচাতে হলে সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভার্নেন্স স্ট্যাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘ড্যাপ নিয়ে জটিলতা টেকসই নগরায়ণ প্রসঙ্গে’ শীর্ষক নাগরিক সংলাপে রাজনৈতিক নেতা, স্থপতি, সাংবাদিকসহ বিশিষ্টজনরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিজিএসের সভাপতি জিল্লুর রহমান। সংলাপে বক্তব্য রাখেন- সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির, সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী, সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী, আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক, ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনারস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী, সাংবাদিক এম এ আজিজ, স্থপতি সরদার আমিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন, আইনজীবী মুজিবর রহমান, সেন্টার ফর এনআরবির চেয়ারপারসন এম এম এস সেকিল চৌধুরী, বিএনপি নেত্রী ফারজানা শারমিন এবং রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক। তারা বলেন, ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে-২০২২ সালে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা-(ড্যাপ) গেজেট আকারে প্রকাশ করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এরপর থেকেই এর সংশোধন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তৈরি হয়েছে মতপার্থক্য। যার কারণে আটকে আছে ড্যাপের সংশোধন ও বাস্তবায়ন। পরিবেশ বাঁচাতে শুধু ড্যাপ সংশোধনই সমাধান নয় ঢাকা নির্ভর আবাসন চিন্তা না করার পরামর্শ তাদের। একই সঙ্গে বাসযোগ্য নগরী গড়ে তুলতে রাজধানীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা মুক্ত করারও তাগিদ বিশিষ্টজনদের। সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির বলেন, সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা। রাজনীতি ও আমলাতন্ত্র দেশটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। আমলা দোষ দেয় রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদরা দোষ দেয় আমলার। আমাদের দরকার সর্বস্তরে নীতিবান ও সৎ ব্যক্তিত্ব।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, আইনের কনসিস্টেনসি বা কন্টিনিউটি থাকতে হবে। বারবার ড্যাপ বদলালে আইন আরও কঠিন হয়ে যাবে। পরিকল্পনার সময় সমন্বয় থাকতে হবে। কোনো সিদ্ধান্ত একটি জায়গা থেকে সবাইকে নিয়ে নির্ধারণ করতে হবে। ২০১২ সালে কেউ রেজিস্ট্রেশন করল। এখন ২০২৫ সাল কিন্তু তার রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এই টাকাটা তারা ট্যাক্সের কই দেখাচ্ছে? কমপ্লায়েন্স থাকতে হবে। বাড়ি বানানোর পর আবার বাড়ি ভাঙা অপচয়। আমাদের প্রথমে দৃষ্টিভঙ্গী বদলাতে হবে। আইন যখন তখন বদলানো বাদ দিতে হবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ভূমিকম্প হলে ঢাকা ধ্বংস হয়ে যাবে। ভবনের চাপে বেশির ভাগ মানুষ মারা যাবে। ডিআইটি থেকে রাজউক করা হয়েছে, ঢাকার উন্নতির জন্য। কিন্তু হয়নি। ঢাকাকে বিকেন্দ্রীকরণ করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। গ্রামগুলোকে উন্নত করতে পারলে ঢাকার ওপর চাপ কমবে। ঢাকার গুরুত্ব কমিয়ে উপজেলার গুরুত্ব বাড়াতে হবে। মাঠ যা আছে, পুকুর যা আছে তা সংরক্ষণ করতে হবে। সাবেক সংসদ সদস্য নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, বাংলাদেশে অনিয়মের কারণে অনেক সম্ভাবনাই বাস্তবে রূপ নেয়নি। বড় ভূমিকম্প হলে চিপা গলির ভিতরের ভবনগুলোর অবস্থা খারাপ হবে। উদ্ধার করা যাবে না কোনো মানুষকে। রিয়েল স্টেট ব্যবসায়ীদের এটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে। ঢাকার ৪১টি ওয়ার্ডে খেলার মাঠ নেই। ভূমিকম্প হলে ভবনের কী হবে তা নিয়ে সরকার চিন্তা করে না। ঢাকার সবুজ এলাকায় ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। যার ফলে সবুজ এলাকা কমে যাচ্ছে।
সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নতি না করতে পারলে ঢাকার জনসংখ্যা আরও বাড়বে। ঢাকার ১ কোটির মেহনতি মানুষকে নিয়ে ভাবতে হবে। কেবল উচ্চ মানুষদেরকে নিয়ে ভাবলে হবে না। ড্যাপের উচিত সমতাভিত্তিক ভাবে কাজ করা।
এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল পোস্ট সম্পাদক এম এ আজিজ, চেয়ারপারসন ও প্রতিষ্ঠাতা সেন্টার ফর এনআরবি এম এস শেকিল চৌধুরী, বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল, বারভিডা-এর সাবেক সভাপতি আবদুল হক, বিডিইএফ সভাপতি সরদার আমিন, রিহ্যাব ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) আবদুর রাজ্জাক, বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন আহ্বায়ক দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ প্রমুখ। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক পারভেজ করিম আব্বাসী। সঞ্চালনা করেন সিজিএস এর প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমান।