১২ জুলাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১২তম দিন। গত বছরের এই দিনে আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। রাজধানীর শাহবাগে পুরোনো স্লোগানের সঙ্গে একটি নতুন স্লোগান যোগ করেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগানটি ছিল- ‘বাধা দিলে, বাধবে লড়াই’। আগের দিন ১১ জুলাই দিনব্যাপী সর্বাত্মক বাংলা ব্লকেডে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে এমন স্লোগান উচ্চারণ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্য দিয়ে তারা জানিয়ে দেন বাধা দিয়ে এ আন্দোলন দমানো যাবে না। চব্বিশের ১২ জুলাই দিনটি ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ জারি রাখেন শিক্ষার্থীরা। রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। চট্টগ্রামে লংমার্চ আর জাহাঙ্গীরনগরে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনকারীরা।
রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ছাত্র ধর্মঘট পালন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টা থেকে ঢাবির বিভিন্ন হল থেকে মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্ট প্রদক্ষিণ করে তারা অবস্থান নেন শাহবাগে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে শাহবাগ ছাড়েন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা ‘বাধা দিলে, বাধবে লড়াই’, ‘হাই কোর্ট না শাহবাগ, শাহবাগ-শাহবাগ’, ‘কোটা নাকি মেধা আগে, জবাব চাই শাহবাগে’, ‘১৮ এর পরিপত্র, বহাল করতে হবে’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’সহ নানা স্লোগান দেন।
এ ছাড়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে স্লোগান দেন তারা। পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে সমন্বয়ক আবু বকর মজুমদার বলেন, ১৩ জুলাই সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলার সমন্বয়কারীদের সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে প্রতিনিধি বৈঠকের পর সন্ধ্যা ৬টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ১২ জুলাই বিকালে রেললাইন অবরোধ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্টেশন বাজারের রেললাইন অবরোধ করেন তারা। কোটা সংস্কার ও শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে মশাল মিছিল করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে চট্টগ্রামজুড়ে লংমার্চ করেন আন্দোলনকারীরা। নগরীর ষোলশহর স্টেশন থেকে শুরু হয় তাদের এ লংমার্চ। লংমার্চটি ২ নম্বর গেট থেকে প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, জামালখান, কাজীর দেউড়ি, জিইউসির মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), অধিভুক্ত কলেজ ও বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার চেয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্মুক্ত লাইব্রেরির সামনে থেকে তাদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বাংলা বাজার, শাঁখারি বাজার, ভিক্টোরিয়া পার্ক ঘুরে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের সড়কে এসে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন তারা। কোটা সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বগুড়ার শিক্ষার্থীরা। বৈষম্যমূলক কোটা নিরসনের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে গিয়ে পুলিশি হামলার শিকার হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে এদিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।